শেষ আপডেট: 9th January 2024 14:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতায় টুকটাক ঘোরার জায়গার কোনও অভাব নেই। তিলোত্তমা বরাবরই নানা দ্রষ্টব্যে ভরা। তার মধ্যে কিছু জায়গা সুপরিচিত, আর কিছু তুলোনায় অচেনা। শুধু একটু খুঁজে দেখতে হবে। এই শীতের সময়ে কলকাতার বিশেষ কিছু জায়গায় দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। সারাবছর এই জায়গাগুলোতে কমবেশি পর্যটকের যাতায়াত থাকলেও শীতকালে তা হয়ে ওঠে রীতিমতো টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন। সকাল থেকে লাইন পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আশেপাশে ছোট খাবার দোকান গজিয়ে ওঠা সবই ভ্রমণপ্রিয় উৎসুক মানুষের জন্য।
অনেকেই এই সময় বাইরে চলে যান ঘুরতে। কেউ যান অনেকদিনের পরিকল্পনা করে রাখা পাহাড় ভ্রমণে। আর যারা অফিস কাছারির যাঁতাকলে পড়ে কোথাও যেতে পারেন না, তারা ঘুরে বেড়ায় এই শহরেরই আনাচে কানাচে। শীতের মরশুমে কলকাতায় ঘোরার মতো বেশ কিছু জায়গা আছে।
১) বোট মিউজিয়াম
কাঁকুড়গাছি এলাকায় আম্বেদকর ভবনের একটা ঘর নিয়ে বানানো হয়েছে এই মিউজিয়াম। ব্রিটিশ আমল তো বটেই, দেশভাগের আগে পর্যন্ত নদীমাতৃক দেশে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌকা। এই পুরো মিউজিয়ামটাই বিভিন্ন ধরনের নৌকা দিয়ে সাজানো। বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া যাতায়াতের মাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছেন এই ভাবনার শরিক স্বরূপ ভট্টাচার্য। এখানে ডিসপ্লেতে থাকা কাঠের নৌকাগুলো বানিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের এক শিল্পী। রোজ সোমবার থেকে শুক্রবার ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মিউজিয়াম খোলা। সকলের জন্য অবাধ প্রবেশ থাকলেও ছবি তোলা বারণ।
২) মিলেনিয়াম পার্ক
শীতকালে ডে -ট্রিপের জন্য কলকাতায় বাঙালির অন্যতম পছন্দের জায়গা হল মিলেনিয়াম পার্ক। স্ট্র্যান্ড রোডের কাছের এই পার্কে জমিয়ে পিকনিক করার সুযোগ রয়েছে। ফলে সপরিবারে ছুটি কাটানোর জন্য এই পার্ক একেবারে আদর্শ। জয় রাইড থাকায় বাচ্চাদের জন্যও দারুণ উপভোগ্য এই পার্ক। সঙ্গে উপরি পাওনা হল গাছগাছালির মাঝে বসে গঙ্গার দৃশ্য উপভোগ।
৩) নকশি কাঁথার মিউজিয়াম
বাংলার আরও এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প নকশি কাঁথার কাজ। মা ঠাকুমার আমলে নকশি কাঁথার ওম মেখে ঘুমিয়ে পড়ার চল থাকলেও আজকাল খুব বেশি দেখা যায় না এই সূক্ষ্ম কাজের শিল্প। গ্রামের দিকে এখনও অনেকেই এই কাঁথা বোনেন। তবে, শহরে বিশেষত কলকাতায় এই শিল্প প্রায় বিলুপ্ত বললেই চলে। যদিও মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমে শোভা পায় কাঁথার কাজের ওয়াল হ্যাংগিং।
বাংলার সুপ্রাচীন এই হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কলকাতায় রয়েছে একটি নকশি কাঁথার মিউজিয়াম, যেখানে গেলে এক ছাদের তলায় দেখতে পাবেন বিভিন্ন ধরনের কাঁথার কাজ। সল্টলেকের আম্বেদকর ভবনে রয়েছে এই মিউজিয়াম। পুরনো ধুতি, পুরনো শাড়ি এমনকি লুঙ্গিতেও রয়েছে নকশি কাঁথার কাজ। এই মিউজিয়ামে ১৫০ বছরের পুরনো নকশি কাঁথার কাজও সকলের দেখার জন্য সংগ্রহ করে রাখা আছে।
৪) ইকো পার্ক
কলকাতার এই পার্কের কথা জানেন না এমন কেউ নেই। বিশাল বড় জায়গা জুড়ে তৈরি এই পার্কে কী না নেই। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য থেকে শুরু করে বাটারফ্লাই গার্ডেন, রাইফেল শ্যুটিং, হাই স্পিড বোটিং, টয় ট্রেন কী না নেই এখানে। এখানে ঘুরতে গেলে সারাদিন হাতে সময় নিয়ে যাবেন কারণ পুরোটা ঘুরে দেখতে বেশ ভালই সময় লাগবে। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তারা দারুণ উপভোগ করতে পারবে এই পার্ক।
৫) স্টোরি
বইপাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কলকাতায় খুলেছে প্রথম তিনতলা বুকস্টোর। নাম 'স্টোরি'। সল্টলেক স্টেডিয়ামের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত এই ত্রিতল বিশিষ্ট এই বইয়ের দোকানে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বইয়ের সংগ্রহ। কলকাতার বইপ্রেমীদের জন্য এটা কিন্তু একটা দারুণ জায়গা। শুধু বই নয়, এখানে চলে থিয়েটার ওয়ার্কশপ, স্টোরিটেলিং সেশন, রাইটিং ওয়ার্কশপও। এখনকার ডিজিটাল দুনিয়ার যুগে বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যেস যাতে হারিয়ে না যায় সেই উদ্যোগ নিয়েই করা 'স্টোরি'। গড়পড়তা ছুটি কাটানোর ঠিকানার বাইরে একটু অন্যরকম জায়গায় সময় কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন এই বুকস্টোরে।