শেষ আপডেট: 10th June 2023 06:35
প্রকৃতি আপন খেয়ালে সাজিয়েছে নিজেকে! ভারতের এই ১০টি গ্রাম যেন স্বর্গ
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেই কবে একদিন জীবনানন্দ গ্রাম বাংলার অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। নদী-মাঠ-ভাটফুলে ঘেরা বঙ্গদেশ তাঁর কাছে ছিল রূপসী বাংলা। তারপর সময়ের চাকা গড়িয়েছে অনেকখানি। বাংলার পুকুর ভরাট করে, গাছ কেটে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর, কলকারখানা। নগরায়নের দাপটে রূপসী বাংলার সেই সৌন্দর্য ক্রমেই ম্লান হয়ে চলেছে। কিন্তু আজও কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে গেলে দু'দণ্ড শান্তির খোঁজে মানুষ সেই গ্রাম্য প্রকৃতির কোলেই আশ্রয় খোঁজে। গাছপালা-পুকুর-নদী-সাগর কিংবা পাহাড়ের কোলে নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে আসতে চায়। আজ ছুটি কাটানোর ঠিকানা হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের তেমনি কয়েকটি গ্রামের কথা বলব (10 villagws in india), যেখানে গেলে যাবতীয় ক্লান্তি, খারাপ লাগা কেটে গিয়ে মন হয়ে উঠবে একেবারে ঝরঝরে, প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ।
১. কল্পা, হিমাচল প্রদেশ: কিন্নর জেলার শতদ্রু নদীর ধারে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয়। বরফে মোড়া পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রামটি যেন ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর নিপুণ হাতে এঁকে দিয়েছেন ভ্রমণ মানচিত্রে। তুষার ধবল পাহাড়ে যখন সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে , যেন মনে হয় গলানো সোনা গড়িয়ে নামছে পাহাড়ের গা বেয়ে।

২. মওলিনলং, মেঘালয়: খাসি পাহাড়ের কোলে এই গ্রামটি ছোট্ট একটি পাহাড়ি জনপদ। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটি ইতিমধ্যেই সমগ্র এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের তকমা পেয়েছে। বৃষ্টিস্নাত সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা মওলিনলংকে ঈশ্বরের নিজস্ব বাগান বলে ডাকা হয়।

৩. গোর্খে খোলা, পশ্চিমবঙ্গ: অবস্থানগতভাবে দার্জিলিঙে হলেও এই গ্রামটি একেবারে সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। গোর্খে নদী এই গ্রামে নিজের ছন্দে বয়ে চলেছে। পাইন গাছের জঙ্গল, তুষারাবৃত পাহাড় আর তিরতির করে বয়ে চলা নদী মিলিয়ে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে সেজে উঠেছে এখানে। দার্জিলিংয়ের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরেই ছুটি কাটানোর আদর্শ ঠিকানা এই গ্রাম।

৪. জিরাঙ গ্রাম, ওড়িশা: গজবতি জেলায় অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি আসলে একটি তিব্বতি জনপদ। এটি পর্যটকদের কাছে চন্দ্রগিরি নামেও পরিচিত। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মঠ রয়েছে এই গ্রামে। পূর্বঘাট পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই গ্রামটি প্রাথমিকভাবে পর্যটন স্থল হিসেবে তেমন পরিচিত না হলেও ধীরে ধীরে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

৫. জিরো গ্রাম, অরুণাচল প্রদেশ: ইটানগরের কাছেই অবস্থিত জিরো গ্রামে ঢুকলেই চোখ পড়বে দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেত, আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম, দৈত্যাকার বাঁশঝাড়। এই গ্রামটিতে অন্তত ১৭০ রকমের প্রজাপতি এবং ৩০০ প্রজাতির পাখির বাস। অসাধারণ জীব বৈচিত্র্য এবং 'জিরো মিউজিক ফেস্টিভ্যাল' নামে একটি সংগীত উৎসবের জন্য বিখ্যাত অরুণাচলপ্রদেশের এই গ্রাম।

৬. মানা, উত্তরাখণ্ড: এই গ্রামটিকে সরকারিভাবে বলা হয় ভারতের শেষ গ্রাম। গ্রামে ঢোকার পথেই সাইনবোর্ডে সেই লেখা চোখে পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই গ্রামের উচ্চতা ৩২০০ মিটার। মানার একেবারে পাশ ঘেঁষে সরস্বতী নদী। এখান থেকে যাওয়া যায় তীর্থক্ষেত্র বদ্রীনাথে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মহাপ্রস্থানের পথে যাওয়ার সময় পাণ্ডবরা এই মানা গ্রাম দিয়েই স্বর্গে গিয়েছিলেন। সরস্বতী নদীর উপর ভীম পুল নামে একটি সেতু রয়েছে, যেটি দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের হাতে তৈরি বলে মনে করা হয়। মানা গ্রামে পাহাড়ের ফাঁকে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন তার ছটায় আক্ষরিক অর্থেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সে দৃশ্য একবার দেখলে কেউ আর ভুলবেন না।


৭. খিমসার গ্রাম, রাজস্থান: রাজকীয়তা আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন এই গ্রাম। নাগাউর জেলায় মরুভূমির মাঝে গ্রামটি অবস্থিত। মধ্যে মধ্যেই রয়েছে মরুদ্যান। বালিয়াড়ির মাঝে ছোট্ট জলাশয়, চারপাশে গাছ। আর তার ছায়ায় গুটিকতক করে ঘর। আপনার মনে গেঁথে থাকা গ্রামের ধারণাই বদলে দেবে খিমসার।



৮. কোলেনগোড় গ্রাম, কেরল: এই গ্রামটি পালাক্কড় জেলার অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থল। খাঁটি কেরলের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিলবে এই গ্রামে। গ্রামের বাড়িঘরও তৈরি হয়েছে কেরলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলী মেনে। গ্রামে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ধানক্ষেত দেখতে ভিড় যেমন পর্যটকরা। এই গ্রামেই রয়েছে কাচামকুড়িসি মন্দির, যেখানে আরাধ্য দেবতা হলেন বিষ্ণুদেব।



৯.মাথুর গ্রাম, তামিলনাড়ু: কন্যাকুমারী থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত মাথুর ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুটি দুটি পাহাড়ের চূড়ার মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই সেতুবন্ধন ঘটিয়েছে। নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পাহারালী নদী। এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটির উচ্চতা ১১৫ ফুট। এটি এশিয়ার দীর্ঘতম এবং উচ্চতম সেতু।

১০. ভারাঙ্গা, কর্নাটক: উদুপী জেলার এই গ্রামটিতে গেলে জৈন ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটবে। এই গ্রামে রয়েছে ৮০০-১০০০ বছরের প্রাচীন জৈন মন্দির। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে রয়েছে হ্রদ, আর সেই হ্রদের ঠিক মধ্যিখানে গড়ে উঠেছে জৈন মন্দির। সেই মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য রয়েছে ছোট্ট ডিঙি নৌকা। গ্রাম্য প্রকৃতির মাঝে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে চাইলে এই গ্রামে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যেতেই হবে।
