শেষ আপডেট: 17th December 2020 12:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শীতকালে বেশিরভাগ মানুষই ত্বকের নানা সমস্যাতে ভোগেন। এ সময় সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয় তা হল ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, ত্বকের রঙ ফ্যাকাশে, একজিমা ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে বয়স আর পরিবেশ ছাড়াও এমন অনেক কারণ আছে যার জন্য ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, ত্বক শুষ্ক দেখাতে পারে। ডার্মাটোলজিস্ট ডঃ রিঙ্কি কাপুর বলেছেন, "স্যানিটাইজার ব্যবহার, অতিরিক্ত সাবানের ব্যবহার, রাসায়নিকযুক্ত পণ্য, গরম জলে স্নান করা আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও ঠিকমতো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার না করলেও ত্বককে রুক্ষ ও শুষ্ক দেখাতে পারে। অনেক সময় জেনেটিক কারণে ত্বক রুক্ষ দেখায়। অ্যাটমিক ডার্মাটাইটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারের রোগ ও সোরিয়াসিসের মতো রোগের চিকিৎসার কারণেও আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। হাই ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল ও এলার্জির ওষুধ ত্বকের জেল্লা নষ্ট করে দেয়।"
কিছু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ডঃ রিঙ্কি। এগুলো মেনে চললে আশা করা যায় ত্বককে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
১. চুলকানির থেকে মুক্তি পেতে চাইলে স্নানের জলে ব্যবহার করতে পারেন ওটমিল বা বেকিং সোডা। হালকা গরম জলে ওটমিলের গুঁড়ো গুলে স্নান করলে চুলকানির থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
২. নারকেল তেল ব্যবহার করুন। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বককে হাইড্রেট ও মসৃণ করে।
৩. ত্বককে ভাল রাখার জন্য ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করা প্রয়োজন। আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে টমেটো, গাজর, মটরশুঁটি, মটর ডাল ও মসুর ডাল জাতীয় খাবার রাখা দরকার।
৪. রাতে শোয়ার আগে ময়শ্চারাইজার হিসেবে সূর্যমুখী বীজের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৫. দুগ্ধজাত খাবারও ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা দুধকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
৬. মধু ও হলুদের মিশ্রণ ত্বকের চুলকানি দূর করে। ত্বকের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
"ত্বকের যত্ন করার জন্য যে কোনও পণ্য ব্যবহার করার আগে, আপনার ত্বকের ধরন কেমন সেটা আগে জানা দরকার। ত্বকের ধরন না জেনে, বিশ্লেষণ না করে পণ্য ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।" বলছেন ডক্টর কাপুর। এর সঙ্গেই তিনি আরও বলেন যে ধরনের পণ্য সাধারণত ব্যবহার করা হয়, সেখানে সামান্য বদল আনলেই উপকার পাওয়া যাবে। যেমন-
১. ত্বককে হাইড্রেট করবে যেমন সিরামাইড, গ্লিসারিন, সর্বিটল, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ল্যানলিন, সিলিকন ও খনিজ তেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
২. ত্বক খুব বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে লিনোলিক ও লরিক অ্যাসিডযুক্ত ইমোলেটিনেট ব্যবহার করতে পারেন। ময়শ্চারাইজার যত বেশি ঘন হবে তত বেশি কার্যকর হয়।
৩. ঠোঁট, কনুই, হিল আর হাঁটুতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন।পেট্রোলিয়াম জেলি শীতকালে হাত পা ফাটার হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
৪. আপনি যদি পাহাড়ি অঞ্চল থাকেন, তাহলে ত্বকের আর্দ্রতাকে বজায় রাখার জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
৫. সাবানমুক্ত ও প্যারাবেন ফ্রি ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে যার মধ্যে প্রাকৃতিক খনিজ তেল রয়েছে।
৬. স্নানের পরে গামছা দিয়ে গা ঘষবেন না। হালকা করে তোয়ালে দিয়ে গা মুছে নিতে হবে।
৭. পরিবেশের সঙ্গে উপযোগী এমন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। দিনের বেলাতে বের হওয়ার আগে সানক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ফিরে শোয়ার আগে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। এর মধ্যে অ্যাভোকাডো তেল, বাদাম তেল, খনিজ তেল যে কোনও একটা ব্যবহার করতে পারেন ময়শ্চারাইজার হিসেবে।
৮. নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। তাহলেই ফিরিয়ে আনা যাবে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া জৌলুসকে।