Latest News

বাংলার হেঁশেল- ঠাকুরবাড়ির রান্না

শমিতা হালদার

বাংলা ভাষার প্রথম উল্লেখযোগ্য রান্নার বই ‘পাকপ্রণালী’ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে। তার বছর তিনেক পর আসে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রান্নার মহাগ্রন্থ ১৯০২ সালে। ঠাকুর বাড়ির হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে যে আশ্চর্য দক্ষতায় সুচারুভাবে তিনটি খণ্ড জুড়ে রান্নার বিষয়ে লিখেছিলেন তা অভাবনীয়। ঠাকুর বাড়ির আরেকজন মহিয়সী ইন্দিরা দেবী নিজে রান্না কর‍তে না পারলেও ভালো রান্নার সমঝদার ছিলেন।  শোনা যায়, বাজার সরকারের লম্বা খাতার ঢংয়ে একটি ডায়েরি বানিয়েছিলেন তিনি। যখনই কোথাও কোনও ভালো রান্না খেতেন তার রেসিপি সংগ্রহ করে লিখে রাখতেন সেই খাতায়। পরবর্তীকালে সেই অমূল্য খাতাটি তিনি দিয়ে যান আরেক গুণবতী কন্যে পূর্ণিমা ঠাকুর’কে।

রবীন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী

রোজকার ক্ষুন্নিবৃত্তির বাইরে রান্নাও যে একটা শিল্প, সেকথা ভুলে যাই আমরা। অথচ বহু আটপৌড়ে বাঙালি রান্নাই নতুন চেহারা পেয়েছে ঠাকুরবাড়িতে ঢুকে। উপাদানের সামান্য তারতম্য আর রসিকজনোচিত প্রশ্রয়ে জোড়াসাঁকোর হেঁশেলে ঢুকে সাধারণ রান্নাই হয়ে উঠেছে অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথ নিজেও প্রবল উৎসাহী ছিলেন নিত্যনতুন রেসিপি উদ্ভাবনে। ‘ঠাকুরবাড়ির রান্না’ নামের বইটিতে ঠাঁই পেয়েছে জোড়াসাঁকোর হেঁশেলের তেমনই নানা স্বাদের বৈচিত্র্যময় রান্নার বিপুল সম্ভার।

রবিঠাকুরের জন্মদিনের প্রাক্কালে আজ যে দুটো রান্নার রেসিপি আমি দেবো, দুটোই লিপিবদ্ধ আছে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রান্নার বইটিতে। সেকালের রান্নার স্বাদ-গন্ধ এক রাখতে পরিমাপগুলো একই রেখেছি-

মাটন হট কারি

উপকরণ-

মাংস ৫০০ গ্রাম
হলুদ ৪ ১/২ ইঞ্চি
শুকনো লংকা ৬ টি
মাঝারি পেঁয়াজ ২ টি
আদা ৬ গ্রাম
বড় পেঁয়াজ ১ টি
ঘি ৩ চামচ
ছোলার ছাতু ১ বড় চামচ
নুন ১১/২ চামচ

প্রণালী-
হলুদ, লংকা, আদা আর মাঝারি পেঁয়াজ বেটে নিতে হবে। মাংস ধুয়ে রাখো। বড় পেঁয়াজ চাকা কেটে রাখো।
ঘি দিয়ে তাতে বড় পেঁয়াজ দাও। আধা ভাজা হলে পেষা মশলা। ছাতু দাও। প্রায় মিনিট ১০ পরে জল টেনে আসলে জলের ছিটা দিয়ে আরও খানিকক্ষণ কষাতে হবে। এবার মাংস ছেড়ে কষো। আরও মিনিট পাঁচ ভাজো।তারপর প্রায় ৪ কাপ জল দিয়ে ঢাকা দাও। আবার মিনিট দশ পরে ফুটে উঠলে, হাঁড়ি দমে বসাতে হবে প্রায় ৪৫ মিনিট। দমে আস্তে আস্তে রান্না হবে, সুসিদ্ধ হবে মাংস।

সহজ জেলি

উপকরণ-

জল ২ কাপ
জেলি পাউডার ৪ চামচ
চিনি ১/৪ কাপ
কমলার রস ৩/৪ কাপ
ফলের টুকরো পছন্দের মতো

প্রণালী-

জেলি পাওডার ভিজিয়ে রাখো। হাঁড়িতে জেলির মিক্স আর চিনি দাও। মিনিট দশ ফুটে উঠলে কমলার রস মিক্স করবে। ওপরে ফেনা আসবে, ভালো করে ফুটে গেলে, ছাঁকনিতে ছেঁকে নেবে, তারপর কেকের মোল্ড-এ ঢেলে দাও। ফলের টুকরো মেশাও, ফ্রিজে রাখো। ৪-৫ ঘণ্টা পরেই পছন্দমতো ফলের জেলি রেডি।

 

শমিতা হালদার, গুরগাঁও-এর বাসিন্দা, সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেও পেশায় একজন অনলাইন কুকিং ট্রেনার এবং হোম শেফ। যুক্ত আছেন রান্না সংক্রান্ত একাধিক ব্লগের সঙ্গে। পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে তাঁর ছাত্রছাত্রী। রান্না ছাড়াও দুঃস্থ বাচ্চা এবং মহিলাদের নিয়ে কাজ করেন। কোভিড আবহে যুক্ত হয়েছেন সমাজকল্যাণমূলক নানা কাজকর্মের সঙ্গেও।

 

বাংলার হেঁশেল- পুরাতনী নিরামিষ রান্না

You might also like