Latest News

খাঁটি নিরামিষ? পেঁয়াজ রসুন ছাড়া! হাজরার ‘গোপালা’য় জিভে জল আনা রকমারি মেনু

চাইনিজ থেকে মোগলাই, পঞ্জাবি থেকে দক্ষিণ ভারতীয়, খাঁটি বাঙালি থেকে কন্টিনেন্টাল সব পদই নিরামিষ!! এমনকী পেঁয়াজ রসুনও নেই রেসিপিতে! পড়ে অবাক হচ্ছেন তো? বিস্ময় দূর করতে হলে চলে যেতে হবে ‘গোপালা’তে। চেখে এসে খবর দিচ্ছেন সোমা লাহিড়ী

সত্যি বলতে কি, অলোক যখন বলল, “দিদি হাজরার কাছে আমার বন্ধু একটা রেস্তরাঁ করেছে, একবার যেতে হবে আপনাকে। খাঁটি নিরামিষ খাবার পাবেন ওখানে”, আমি খুব একটা ইন্টারেস্টেড হইনি। নিরামিষে আমাদের আগ্রহটা একটু কমই। যাই হোক ‘গোপালা’য় পৌঁছলাম এক শীতের বিকেলে। নীচে ঢোকার মুখে জগন্নাথদেব, দেবী সুভদ্রা ও বলরামদেবের মনোরম বিগ্রহ। দোতলায় বেশ বড় হল। ছিমছাম সজ্জা।আপ্যায়ন করলেন প্রণীতা সাহু। তারপর যা হল সে লিখে বোঝাতে পারব না। সেই ভূতের রাজার বরের মতো আসতে লাগল একের পর এক খাবারের প্লেট। প্রথমেই এল কাবাব প্ল্যাটার। নিরামিষে কাবাব প্ল্যাটার শুনে কাঁঠালের আমসত্ত্ব মনে হচ্ছে তো? আমারও হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন এতো সুস্বাদু যে নিরামিষ কাবাব হতে পারে আমি ভাবতে পারিনি। এই প্ল্যাটারে  থাকে তন্দুরি মোমো, পনির হরিয়ালি কাবাব, সয়া টিক্কা কাবাব, তন্দুরি আলু, তন্দুরি পনির টিক্কা- এই পাঁচ রকম আইটেম। পেঁয়াজ রসুন ছাড়া যে নিরামিষ কাবাবের এই স্বাদ হতে পারে তা সত্যিই ভাবা যায় না।এরপর এল চাইনিজ। গরমাগরম ক্রিম টম্যাটো স্যুপ, লেমন করিয়েনডার স্যুপ। অসাধারণ তার স্বাদ। এরপর এল সেজওয়ান হাক্কা নুডলস, ফ্রায়েড রাইস, ভেজ মাঞ্চুরিয়ান, চিলি পনির- নাহ্, কোনওটাতেই পেঁয়াজ রসুন নেই। এক্কেবারে শুদ্ধ নিরামিষ।হঠাৎ দেখলাম চিকেন ললিপপের মতো কিছু সাজিয়ে হাজির একটা প্লেট। আমার অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে প্রণীতা বললেন, “কলিফ্লাওয়ার ললিপপ দিদি। খেয়ে দেখুন। খুব টেস্টি। ছোটদের খুব পছন্দের মেনু এটা। আর ইয়াং জেনারেশনের পছন্দ পাপড়ি পনির, এটা কর্নফ্লেক্স দিয়ে মুচমুচে পনির প্রিপারেশন।’কথা হচ্ছিল প্রণীতা আর ওঁর হ্যাজব্যান্ড দেবী সাহুর সঙ্গে। ওঁরা ওড়িশার মানুষ। জিগ্গেস করলাম, “আপনারা কি নিরমিষাশী? ওড়িশার খাওয়াদাওয়া তো অনেকটাই আমাদের মতো, আমিষ-প্রধান। তাহলে হঠাৎ নিরামিষ রেস্তোরাঁ করা কথা মনে হল কেন?”
মৃদু হেসে প্রণীতা বললেন, “আসলে দেখলাম কলকাতায় সব ধরনের রেস্তোরাঁ আছে, কিন্তু পিওর ভেজ রেস্তোরাঁ খুব কম। আর থাকলেও নয় শুধু বাঙালি পদ, না হয় সাউথ ইন্ডিয়ান ইডলি দোসা- এই পাওয়া যায় নিরামিষ রেস্তোরাঁগুলোতে। আমি আর আমার স্বামী, দু’জনেই রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসি। তাই ভাবলাম এই দিকটায় যখন পরীক্ষানিরীক্ষা কম হয়েছে, তখন এই দিকটাই এক্সপ্লোর করি।”আজ তো আপনার ‘গোপালা’র জন্মদিন। একবছর পূর্ণ হল। অতিমারীর সময় নতুন রেস্তোরাঁ খুললেন?
প্রণীতা বললেন, “একটা নোবল কজও ছিল। সেইসময় যেসব বাড়িতে সবার করোনা, তাঁরা সময় মতো খাবার পাচ্ছিলেন না। তাঁদের কথা ভেবে স্বাস্থ্যকর থালি করেছিলাম মাত্র ৯৯ টাকায়। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাত, রুটি, ডাল, দু’রকম সবজি, দই, মিষ্টি থাকত। ফোনে অর্ডার করলে আমরা পৌঁছে দিতাম। সুস্থ হওয়ার পর তাঁরা আমাদের অনেক আশীর্বাদ করেছেন। এটাই আমার প্রেরণা। মানুষের শুভেচ্ছাই আমার ‘গোপালা’কে এগিয়ে নিয়ে গেছে।”কথা বলতে বলতে টেবিলে এসে গেছে নর্থ ইন্ডিয়ান ডিশ- পোলাও, নভরতন কোর্মা, পনির কোপ্তা কারি। সঙ্গে লোভনীয় রঙিন মকটেল।
প্রতিটা পদ এক চামচ করে খাওয়ার অনুরোধ আর রাখা গেল না। কিন্তু খুশবু জানান দিচ্ছিল পদগুলো কতটা সুস্বাদু। এরপর এল দক্ষিণ ভারতীয় দোসা। উঁহু, সাধারণ রূপে নয়, চিজে মাখামাখি হয়ে। রূপ দেখেই জিভে জল আসবে। আর খাওয়ার পর চোখ বুজে আসবে আমেজে। কিন্তু আমার এই অনুভূতিতে মজে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই বললাম, পরে একদিন শুধু এটার জন্যই আসতে হবে।এই মুহূর্তে ‘গোপালা’তে এসেছে নানা ধরনের কম্বো মিল। সুন্দর প্যাকেজিং, আর মনভরানো মেনু।ফ্রয়েড রাইস, পনির-সবজি, ফ্রয়েড রাইস, ভেজ মাঞ্চুরিয়ান, চিলি পনির, পরোটা-সবজি-পনির, এই ধরনের ভ্যারাইটি আছে। দাম ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। অফিস লাঞ্চ হিসেবেও বেশ ভালো।আর? এক্কেবারে এক্সক্লুসিভ একটা মেনু আছে এখানে। যেহেতু এঁরা ওড়িশার মানুষ, তাই জগন্নাথদেবের ভোগের থালি করেন খুব যত্ন করে। নাম ‘একদশী প্রসাদম’। দাম ২৫০ টাকা।
আর একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, কেউ যদি আমন্ত্রিতদের নিরামিষ মেনুতে আপ্যায়ন করতে চান, তাহলে ‘গোপালা’ পার্টি আরেঞ্জও করে দেয়। ৬০ জনের ব্যবস্থা অনায়াসে হয়ে যাবে এখানে। তবে কয়েকদিন আগে জানাতে হবে। আর টেক অ্যাওয়ে সার্ভিসও রয়েছে।
এবার ঠিকানা আর ফোন নম্বরটা শেয়ার করি আপনাদের। গোপালা , ৮/১ এ, হাজরা রোড, বকুলবাগান, ভবানীপুর, কলকাতা-২৬, ফোন: ৯৯০৩৯৪২৯৫৪ 

 

 

You might also like