শেষ আপডেট: 18 September 2023 11:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ বছর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা চলছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার দাপট। অ্য়াডেনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি ভাইরাস এত বেশি ছড়াচ্ছে যে এখন জ্বর (Fever) এলেই চিন্তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর (fever) হলেই অযথা আতঙ্কিত হবেন না। ডাক্তারকে না জিজ্ঞেস করে মুঠো মুঠো অ্য়ান্টিবায়োটিকও খাবেন না। এমন পরিস্থিতিতে কী কী করা উচিত তা বিস্তারিত বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, দেড় থেকে বছর দশেক। প্রধানত এই বয়সসীমার বাচ্চারা জ্বরে ভুগছে এখন। জ্বরের (Fever) মূলত দু’টো কারণ। এক, ভাইরাসের আক্রমণ। যাকে আমরা বলি ভাইরাল ফিভার। দুই, ব্যাকটেরিয়ার হানা বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। নাম না জানা একাধিক ভাইরাস আছে, যাদের কারণে আমরা জ্বরে ভুগতে পারি। এর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই। যার যেমন উপসর্গ, সেইমতো ওষুধ।
প্রথমেই সাবধানতা মেনে চলতে হবে৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে শরীর বেগড়বাঁই করতে আরম্ভ করে অনেক সময়ে, তাই জ্বর হলেই ধরে নেবেন না যে অ্যাডেনো বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। মনে রাখবেন, ভাইরাল ফিভার হলে সাধারণত জ্বরের সঙ্গে মাথা-গা-ঘাড় ও চোখের পিছনে তীব্র ব্যথাভাব থাকে। ক্লান্তিও থাকে। তবে হ্যাঁ, যদি জ্বর কমতে না চায় এবং শুকনো কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে তখন টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি।
জ্বর (fever) আসার দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে বেসিক রক্তপরীক্ষাগুলি করান। জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে রক্তপরীক্ষা করালে সমস্ত রিপোর্টই নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা বেশি৷ ‘বেসিক পরীক্ষা' মানে আগে রুটিন ব্লাড কাউন্ট দেখা দরকার৷ তা থেকেও বোঝা যায় যে ভাইরাল ফিভার হয়েছে বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ আছে৷
আরও পড়ুন: শরীরের জল শুষে নিচ্ছে ডেঙ্গি ভাইরাস, হেমারেজিক ও শক সিন্ড্রোমই সবচেয়ে বড় আতঙ্ক
সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন, নিজে ডাক্তারি করবেন না। লাগাতার কয়েক দিন ধরে জ্বর আসছে? সেক্ষেত্রে এখনই ডাক্তারের কাছে যান৷ যে কোনও ভাইরাল ফিভারের ক্ষেত্রেই শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি বাড়তে দেবেন না, জ্বর কমানোর ওষুধ খান। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করবেন না, নিজের ইচ্ছেয় অ্যান্টিবায়োটিকও খাবেন না, তাতে জটিলতা বাড়বে।
প্রথম কাজ জ্বর কমানো। প্যারাসিটামলে না হলে, জলপট্টি, গা-হাত-পা মুছিয়ে দেওয়া যায়। স্নানও করানো যেতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বরফ জলের ব্যবহার কোনওমতেই নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, জ্বরের সময় রক্তপ্রবাহের গতি বেড়ে যায়। ফলে আমাদের শিরা-ধমনী একটু স্ফীত হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় কনকনে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে এলে সেগুলি হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে যাবে। এই ট্রান্সফরমেশন অনেকের শরীর নিতে পারে না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
হাল্কা গা ম্যাজম্যাজে ভাব থাকলে চিন্তার কিছু নেই। ঘরেতেই ক'দিন বিশ্রামে থাকুন। গরম জলের ভাপ নিন। হালকা খাবার খান। পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। বেশি করে জল খান। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খান। মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের (Viral Fever) সংক্রমণ থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরিবারের অন্য কারও সূত্রে করোনা ঘরে এলে সবার প্রথমে তা রোগীর শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করে নিন। করোনার সময়েও অনেকে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে বিপত্তি বাঁধিয়েছিলেন। ভিটামিন বা জিঙ্ক ট্যাবলেটও নিজে থেকে খাবেন না। শরীর বুঝে ডাক্তারই প্রেসক্রাইব করে দেবেন।
অ্যাডেনোভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের জ্বরের তাপমাত্রা থাকছে ১০৪ ফারেনহাইট মতো। এ ছাড়া পেট খারাপ, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, ৬-৮ বার মতো পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথার মতো কিছু উপসর্গ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। বাচ্চাদের জ্বর হলে ভয় পাবেন না। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খাওয়াবেন। বাচ্চাদের বাইরের খাবার খেতে দেবেন না। বাড়িতেই হাল্কা, কম তেলে রান্না করা খাবার খাওয়ান। বাচ্চার নাক বন্ধ থাকলে বা নাক দিয়ে জল পড়লে, গরম জলের ভাপ দিন। এ ক্ষেত্রে গরম জলের পাত্রে ইউক্যালিপটাস তেল বা মেন্থল তেল দিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার ভাপ নিতে হবে। এতেই সংক্রমণ কমবে। ২-৩ দিনে জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার।