
পোস্ট-কোভিড হৃদরোগ বাড়ছে, তাই করোনা কমলেও কার্ডিওলজিস্টদের যুদ্ধ চলবেই: ডক্টর পি.সি. মণ্ডল
দ্য ওয়াল: গত দেড় বছরের এই কোভিড পরিস্থিতি, কীভাবে দেখছেন, কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই সময়কে?
ডক্টর পি.সি. মণ্ডল: কোভিডে হার্টের অসুখ নিয়ে কথা বলতে গেলে যেটা সবার আগে বলতে হয়, এমার্জেন্সি নিয়েই বেশির ভাগ হৃদরোগী হাসপাতালে আসেন। সে সময়ে কোভিডের সমস্ত বিধি মেনে দ্রুত চিকিৎসা করা খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই বিষয়টা বুঝতে আমাদের সময় লেগেছে, অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।
অন্য একটা বিষয় হল, কোভিডের কারণে হৃদরোগের নানা রকম জটিলতা অনেক বেড়ে গেছে। অদ্ভুত সব সমস্যা নিয়ে আসছেন রোগীরা। হার্টকে সরাসরি আক্রমণ করছে করোনাভাইরাস, এমনটাও ঘটছে আকছার। কোভিডের মৃত্যু অ্যানালাইসিস করলে দেখা যাচ্ছে, করোনার কারণে হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। কারও আবার রক্তচাপ এমন নেমে যাচ্ছে, আর তোলাই যাচ্ছে না। এগুলোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এত দিনের কেরিয়ারে কখনও দেখিইনি, এরকম অসুখও দেখছি এখন হার্টের। কমবয়সি রোগীরা অদ্ভুত ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। ভাইরাসের আক্রমণ, রক্ত ক্লট হয়ে যাওয়া– কত রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে এই সংক্রমণে। দেড় বছরে প্রতিটা মুহূর্তে আমায় যে স্ট্রেস এবং পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তাতে আমার বয়স যেন আরও দশ বছর বেড়ে গেছে।
দেখুন, কী বলছেন ডাক্তারবাবু।
দ্য ওয়াল: কোনও বিশেষ সাফল্য রয়েছে এই দেড় বছরে?
ডক্টর পি.সি. মণ্ডল: কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে একটি ১৯ বছরের ছেলে ফের হাসপাতালে ভর্তি হল, অসহ্য পায়ে ব্যথা নিয়ে। এত ব্যথা, যে ওর পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না ঠিকমতো। এমনকি পায়ের পাল্সও আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখা গেল, বাঁ পায়ের যে মূল শিরা, সেটিতে রক্ত ক্লট হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই এত ব্যথা। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল, পা-টা ধীরে ধীরে প্যারালাইসিসড হয়ে যাচ্ছে।
তাৎক্ষণিক ভাবে অপারেশন করে, থ্রম্বোলাইসিস পদ্ধতিতে ওর পায়ের শিরার ক্লট খোলার ব্যবস্থা করা হয়। এতে ব্যথা কমল, পা নাড়াতেও পারল। কিন্তু দুদিন পরে পা ফুলতে লাগল। এটা হয়, রক্ত চলাচল বন্ধ থাকার পরে ফের শুরু হলে। একে বলা হয় কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম। আরও ২০-২৫ দিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে রোগী।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, আমাদের, কার্ডিওলজিস্টদের যুদ্ধ কিন্তু শেষ হবে না কোভিডের ঢেউ কমে গেলেও। কারণ বিশ্বজুড়ে পোস্ট কোভিড সিনড্রোমে ভুগবেন বহু রোগী। কোভিড থেকে সেরে উঠলেও প্রতিটি রোগীর কার্ডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
দ্য ওয়াল: ১ জুলাই ডক্টর্স ডে, এই দিনটায় কোনও বিশেষ বার্তা দেবেন?
ডক্টর পি.সি. মণ্ডল: বহু সহকর্মীকে হারিয়েছি আমরা কোভিডে। তাই এই ডক্টর্স ডে-র অর্থ আমাদের কাছে আর শুধুই ডাক্তারদের দিন নয়। এই দিনটা তাঁদের স্মরণ করার দিন, যাঁরা পেশাগত দায়বদ্ধতা রক্ষা করেছেন নিজেদের প্রাণ দিয়ে। ভবিষ্যতের ডাক্তারদের বলব, এই পেশায় প্রবেশ করার অর্থ, মানুষের সেবা করার শপথ নেওয়া। আমাদের পেশার সম্মান বজায় রাখতে হবে আমাদের। আমরা চিকিৎসা করব বলেই এসেছি, এটা যেন কখনও ভুলে না যাই কেউ। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, ঝুঁকি যতই থাকুক, আরও উন্নত ভাবে রোগীকে পরিষেবা দেওয়াই আমাদের একমাত্র চিন্তার বিষয়।