
স্বাস্থ্যখাতে নজর দিচ্ছে সারা বিশ্ব, এটাই কোভিডের ‘পজিটিভ’ দিক: ডক্টর দেবরাজ যশ
দ্য ওয়াল: গত দেড় বছরের এই কোভিড পরিস্থিতি, কীভাবে দেখছেন? পালমোনোলজিস্ট হিসেবে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই সময়কে?
ডক্টর যশ: কোভিডের প্রথম ঢেউ ও তার প্রভাব আর পাঁচ জনের মতোই আমার কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল। একেবারে শূন্য থেকে শুরু হয়েছিল এ অসুখ বোঝাপড়া এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই। তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তার অভিঘাত ছিল অনেক বেশি তীব্র। ফুসফুসের সমস্যা, ‘ফাইব্রোসিস’ অর্থাৎ ফুসফুস ছিবড়ে হয়ে যাওয়া– এ সমস্যা প্রথম দিকেও ছিল। অনেক প্রাণও চলে গেছে করোনাভাইরাসের এই আক্রমণের জেরে।
কিন্তু এইবারের সমস্যা হল, বহু কোভিড রোগী সেরে ওঠার পরেও বিশ্রী ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। হয়তো কোভিড নিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়নি রোগীকে। বাড়িতেই সেরে উঠেছেন কোনও জটিলতা ছাড়া। কিংবা হয়তো হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সেরে উঠে বাড়ি এসেছেন। রিপোর্ট নেগেটিভ তাঁদের। তবে সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহ পরে আবার একটা জ্বর আসছে। এটা একটা সাধারণ উপসর্গ। অনেকের হয়তো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা অন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং যথেষ্ট আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছচ্ছে ফুসফুস। এটা প্রথম ওয়েভে তেমনটা দেখিনি। পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিস এমন মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।
আরও পড়ুন: কোভিড-যুদ্ধ শুরু হয়েছে শূন্য থেকে, এ যুদ্ধের জয় ব্যক্তির নয়, সমষ্টির: ডক্টর শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
আরও একটা বিষয় হল, প্রথম ঢেউয়ে যেখানে বয়স্ক, কো-মর্বিড রোগীরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বেশি, দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই প্রভাবটা পড়েছে বহু কমবয়সি রোগীদের উপর। ভ্যাকসিন না পাওয়া বা অন্য কিছু, এটার কারণ যাই হোক না কেন, বহু কমবয়সি রোগীই অকালে মারা গেছেন এই সমস্যায়। আমি কোভিড রোগীদের বিশেষ করে বলব, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে যা সমস্যা হবে, তা যত ছোটই হোক না কেন, যে কোনও কিছুতেই চিকিৎসকের কাছে যান। সমস্যাগুলি জানান। কোনও অসুবিধা অবহেলা করবেন না বা নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
দেখুন, কী বলছেন ডাক্তারবাবু।
দ্য ওয়াল: ১ জুলাই ডক্টর্স ডে, এই দিনটায় কোনও বিশেষ বার্তা দেবেন?
ডক্টর যশ: গত কয়েক মাসে আমরা বহু সহকর্মীকে হারিয়েছি, তাঁদের পরিবারকে হারিয়েছি। কিন্তু এই হারানোই শেষ কথা নয়। আমরা বহু চিকিৎসক বহু কিছু শিখেছি। অনেক চিকিৎসকের বড় কোনও জটিল, গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতাই হয়তো ছিল না, তাঁরা নিজেদের তৈরি করতে পেরেছেন। অনেক ছোট হাসপাতাল, সরকারি হোক বা বেসরকারি কত কম সময়ে সুন্দর পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে। স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার– এ নিয়ে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশ নড়ে বসেছে। এই সবকটি বিষয়ই আমার কোভিডের পজিটিভ দিক মনে হয়েছে। যদিও কোভিড রোগের ক্ষেত্রে পজিটিভ মানেই বিপদ, কিন্তু কোভিড আমাদের যা শেখাল, সেটা পজিটিভ ভাবেই গ্রহণ করতে হবে।