শেষ আপডেট: 27th March 2023 10:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাচ্চাদের স্থূলত্ব (childhood obesity) ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা লিভারের অসুখ, ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্কুলগুলির ১০-১৫ শতাংশ বাচ্চারই ওবেসিটি রয়েছে। দেখা গেছে, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা, শরীরচর্চার অভাব বাচ্চাদের ওবেসিটির (Child Obesity) অন্যতম কারণ। তবে কারণ আরও আছে। কারণ দেখা গেছে, খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে বা শরীরচর্চা করিয়েও লাভ হয়নি অনেক বাচ্চারই। ওজন শুরুতে কমলেও পরে আবার বেড়েছে। কী কারণে এমন হচ্ছে এবং এর প্রতিকার কী তা বুঝিয়ে বলছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদেরা।
'বিএমসি মেডিসিন' (BMC Medicine) নামে একটি হেলথ জার্নালে এই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ হাজারের উপর বাচ্চাদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ৫ বছর থেকে ১২ বছর অবধি শিশুদের নেওয়া হয়েছিল। বাচ্চাদের ডায়েট, এক্সারসাইজ সবকিছুর উপর নজর দেওয়া হয়। তাতেই দেখা গেছে, কী কারণে দ্রুত ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএফএইচএস)-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালে স্থূলত্বের হার অনেকটাই বেড়েছে। গ্রামীণ এলাকাতেও বাচ্চাদের মধ্য়ে ওবেসিটির হার ৩০ শতাংশ বেশি। অস্বাস্থ্যকর খাওয়া, কম ঘুম, যখন তখন জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবৃত্তি বাচ্চাদের স্থূলত্ব বাড়াচ্ছে। আর ওবেসিটি ছোট থেকেই নানা রোগের কারণ হয়ে উঠছে। হার্টের অসুখের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর কিন্তু ওবেসিটি।
কী কী কারণে ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের (childhood obesity)?
ছোটবেলায় দেখা যায় হঠাৎ করে মেদ জমতে শুরু করেছে (Child Obesity)। বুক, পেট, কোমর চওড়া হচ্ছে। শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমছে। হাত-পায়ের তুলনায় পেট ফুলে যাচ্ছে। তখন সতর্ক হতে হবে। রক্তের পরীক্ষা করাতে হবে। ট্রাঙ্কাল ওবেসিটিতে বেশি ভোগে বাচ্চারা। ভুঁড়ি বাড়তে থাকে। পেট ও তলপেটে মেদ বাড়ে। কোমর চওড়া এবং পেটে মেদ জমে ফুলতে শুরু করে।
ফাস্ট ফুড, ঠাণ্ডা পানীয় বা অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে, শারীরিক পরিশ্রম না করা কিংবা কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ওজন বাড়তে পারে।
বাচ্চাদের খিদে পেলেই বাবা-মায়েরা চিপস কিনে দিচ্ছেন বা অনলাইনে চটজলদি পিৎজা-বার্গার-চকোলেট পেস্ট্রি অর্ডার দিয়ে দিচ্ছেন। এরপরে অ্যাসিডিটি হলেই বড়দের মতো অ্য়ান্টিসিড খাইয়ে দিচ্ছেন। এখনকার অনেক বাচ্চাই অ্য়ান্টাসিড জাতীয় ওষুধ বা হোমিওপ্যাথির হজমের ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত স্থূলত্ব ও কম বয়সেই নানা রোগ ধরে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।
আরও একটা কারণ হল বাচ্চা তার অবসর সময় কীভাবে কাটাচ্ছে। স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা বা কোনও একস্ট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির বাইরে বাচ্চা কি অলসভাবে সময় কাটায়, সেটাও ওবেসিটির অন্যতম ফ্যাক্টর বলে ধরে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অনেক বাচ্চাই পড়াশোনা হয়ে গেলে বাইরে খেলতে যেতে পছন্দ করে না। বাড়িতেই অলসভাবে মোবাইলে গেম বা ভিডিও গেম নিয়ে বসে পড়ে। অথবা শুয়ে থাকে। অনেক বাচ্চাই বিছানায় শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে গেম খেলে, ফলে আলস্য বাড়ে ছোট থেকেই। ওবেসিটির এটাও একটা কারণ। অনেক মা-বাবাই আছেন বাচ্চাকে দিয়ে কোনও কায়িক পরিশ্রম করাতে চান না। বাইরে খেলাধূলা করতে দিতেও আপত্তি। বাচ্চার সবকাজই তাঁরা করে দেন, ফলে বাচ্চাও ভীষণভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকে। অলস হয়ে সময় কাটায় যা পরবর্তী সময়ে স্থূলত্ব ও নানারকম শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে।
কীভাবে সন্তানের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন বাবা-মায়েরা?
জাঙ্ক ফুডকে বলতে হবে গুডবাই। খিদে পেলেই চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা বার্গার, সসেচজ, সালামি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। বাচ্চাদের এইসব খাবারের প্রতি ঝোঁক বেশি। তাই ছোট থেকেই এই অভ্যাসে লাগাম টানা দরকার।
ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নির্দিষ্ট নিয়মে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মা-বাবাকেও মানতে হবে কিছু নিয়ম। রান্না করতে ইচ্ছে করছে না বলে শিশুকে যথেচ্ছ সাপ্লিমেন্ট বা হেলথ ড্রিঙ্ক খাইয়ে রাখা, কিংবা যখন তখন বায়না করলেই চকোলেট দিয়ে বায়না মেটানো এসব অভ্যাস ছাড়তে হবে।
চোখের খিদেতে বাচ্চারা অনেক সময় এটা খাব সেটা খাব বলে বায়না করে। পেট ভর্তি থাকলে বা কিছুক্ষণ আগে খাওয়ালে আর খেতে দেবেন না। দিনে ৬টা মিলে অভ্যস্ত করান। অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়ান।
বেশি করে শাকসব্জি-ফল খাওয়ান। খুচরো খিদে মেটাতে হাল্কা চিকেন স্ট্যু বা সব্জি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দিন। ওটস-দই দিয়ে পরিজ করে দিতে পারেন। বাইরের খাবার বা প্যাকেটজাত খাবার একদম চলবে না।
ঝালমশলার খাবারের বদলে রোজকার ডায়েটে রাখতে হবে ডাল, মাছ, মুরগির মাংস, সবুজ শাকসব্জি, ফল আর সয়া প্রোটিন।
ছোট থেকে শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি হলে মেদ জমার প্রবণতা কমে।