
করোনাজয় মানেই সুস্থ নয়, রয়ে যাচ্ছে বহু সমস্যা! সমাধানে অ্যাপোলোর ‘পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিক’
কিন্তু তথ্য বলছে, যাঁরা কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের মানুষের শরীরে কিন্তু নানা প্রতিক্রিয়া ঘটছে, যার জেরে নানা সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। তাঁদের বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে এবার বিশেষ ক্লিনিকের সূচনা করল অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতাল। ১৯ অক্টোবর অ্যাপোলো গ্রুপের হসপিটাল নেটওয়ার্ক জুড়ে ‘পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিক’ চালু করার কথা ঘোষণা করল তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে বহু রোগী সংক্রমণের কারণে থেকে যাওয়া মৃদু ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কোভিড রোগী ভোগেন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, হার্টের সমস্যা, গাঁটের ব্যথা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা এবং স্মৃতি হারানোর সমস্যায়। সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার কয়েক মাস পরেও এসব চলতে থাকে। তাঁদের দেখভাল করবে এই ক্লিনিকগুলি।
জানা যাচ্ছে, দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে কোভিড ১৯। স্ট্রোক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের মতো জটিল রোগ, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের মতো ক্রনিক রোগ— এসবই কোভিড ১৯ পরবর্তী উপসর্গের ফল। তাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পরেও বহু রোগীর হঠাৎ মৃত্যুর খবর এসেছে। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী তীব্র কার্ডিয়াক সমস্যা।
পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিকগুলিতে থাকবেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যাঁদের মধ্যে থাকবেন নিউরোলজিস্ট ও ইমিউনোলজিস্টরা। তাঁরা রোগীদের কোভিড পরবর্তী সমস্যাগুলি মেটাতে সাহায্য করবেন এবং তাঁদের সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করবেন।
অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপ সিইও (ইস্টার্ন রিজিয়ন) রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমাদের হাসপাতালে অনেকেই কোভিড ১৯ থেকে সেরে উঠেছেন। তাঁরা নানা শারীরিক সমস্যার কারণে পরেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন না ওই সব সমস্যার জন্য তাঁরা কাদের কাছে যাবেন। কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠা এই সব রোগীদের স্বাস্থ্যের সমস্যা মেটানোর জন্য আমরা এই পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিক চালু করেছি।”
কোভিড পরবর্তী সমস্যার চিকিৎসার জন্য এই বিশেষ ক্লিনিকগুলি রোগীদের সাহায্য করবে প্রয়োজনীয় বিশেষ যত্ন ও পরিষেবা পেতে। এর জন্য নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখানে চিকিৎসা করিয়ে কোভিডের পরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন রোগীরা, এমনটাই দাবি করছে অ্যাপোলো।
অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতাল, কলকাতার ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল সার্ভিসেস (ডিএমএস) ডক্টর শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোভিড ১৯ শুধু ফুসফুসে সংক্রমণই ঘটায় না। প্রভাবিত করে দেহের অন্য অঙ্গগুলিকেও। ফলে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা থেকে যায়। রোগী সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরেও কিছু লক্ষ্ণণ দেখা দিতে পারে। যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তেমন রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থেকে যাওয়াটা আরও স্বাভাবিক। আবার যে সব রোগী মৃদু সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন তাঁরাও ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রণ থেকে ভুগতে পারেন। দীর্ঘ স্থয়ী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পড়ে এমন সমস্যা যা রোগীকে বড়সড় অসুস্থতার মুখে ফেলতে পারে। এই বিশেষ ক্লিনিক আমাদের সাহায্য করবে রোগীদের ওপর ধারাবাহিক ভাবে নজরদারি চালাতে এবং প্রয়োজনের সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।”
অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতাল, কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “কোভিড ১৯-এর আগে, আমরা এনসিডি-র সুনামির মুখে পড়েছিলাম। এই রোগগুলি ৭০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী। এর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পোস্ট কোভিড সিনড্রোম। যদি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা না হয়, তাহলে কোভিড থেকে সেরে ওঠা ক্রনিক রোগে অসুস্থ বহু ব্যক্তি অতিমারীর পরেও মরবিডিটিতে আক্রান্ত হবেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিকে জোর দিচ্ছি আমরা।”
প্রাথমিক ভাবে পোস্ট কোভিড রিকভারি ক্লিনিকগুলি চালু হবে কোভিডের চিকিৎসা করা হয় এমন অ্যাপোলো হাসপাতালগুলিতে। এগুলি রয়েছে চেন্নাই, মাদুরাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, মাইসুরু, কলকাতা, ভুবনেশ্বর, গুয়াহাটি, দিল্লি, ইন্দোর, লখনউ, মুম্বই ও আমেদাবাদে।