Latest News

কোলোস্ট্রাম সম্পর্কে মা-এর সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি, কোনওভাবেই যাতে নষ্ট না হয় মায়ের প্রথম এই দুধ

অগস্টের শুরুর সপ্তাহকে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ পান সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়।  মায়ের দুধের মতো উপাদেয় আর কোনও কিছুই হয় তো এই পৃথিবীতে নেই।  একটি শিশুর জন্য এবং সদ্য মায়ের জন্য এই স্তন্যপান কতটা জরুরি, কী ভাবেই বা এই দুধ খাওয়ানো উচিত, কত বছর এই দুধ বাচ্চার জন্য দরকার, তা নিয়েই বিশিষ্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান জয়ন্ত কুমার মুদুলি কী বলছেন জানুন…

দ্য ওয়াল : বাচ্চার জন্মের পরেই মায়ের প্রথম যে দুধ তৈরি হয়, অর্থাৎ কোলোস্ট্রাম, তার উপকারিতা ঠিক কী?
ডাঃ মুদুলি:
বাচ্চার জন্মের পরে মায়ের স্তন থেকে প্রথম যে দুধ আসে, তাতে হলদে রঙের একরকমের তরল থাকে।  একে কোলোস্ট্রাম বলে।  এতে তুলনামূলক কম ফ্যাট, কম কার্বোহাইড্রেট থাকে।  শিশুর জন্য সহজপাচ্য হয়।  পরে যে তরল আসে মায়ের স্তন থেকে, সেই দুধও শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।  জন্মের আগে যে পরিমাণ কোষ, শ্লেষ্মা, পিত্ত শিশুর পেটের মধ্যে জমে থাকে, সেগুলো পেট থেকে বের করে দিয়ে পেট পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই দুধ।

দ্য ওয়াল : এই কোলোস্ট্রাম সম্পর্কে মায়ের কতটা সচেতন হওয়া জরুরি?
ডাঃ মুদুলি:
কোলোস্ট্রাম সম্পর্কে মা-এর সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।  বাচ্চার জন্মের আগেই কোলোস্ট্রাম-এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে মায়ের অবগত থাকা উচিত।  তাহলে শিশুর জন্মের পরে কোনওভাবেই কোলোস্ট্রামের অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে নতুন মা নজর দিতে পারবেন।

দ্য ওয়াল : জন্মের পর থেকে কত দিন শিশুকে শুধু দুধের উপরেই রাখতে হয়?
ডাঃ মুদুলি:
ছয় মাস, অন্তত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালেই সারাজীবনের জন্য একটি মানুষ অনেকটা সুস্থ, সুন্দর থাকতে পারবেন।  এই সময়েই ভবিষ্যতের জন্য শরীরের এবং মস্তিষ্কের গঠন তৈরির প্রাথমিক অবস্থা থাকে।

দ্য ওয়াল : সে সময়ে কি জল খাওয়ানো যায়? আর কোনও সলিড খাবারের কি দরকার হয়?
ডাঃ মুদুলি: না, সেভাবে প্রয়োজন নেই।  মায়ের দুধকে সে জন্যই সর্বগুণ সম্পন্ন পুষ্টিকর খাবার বলা হয়।  তাই এ সময়ে অন্য কোনও খাবার বা জলের প্রয়োজন থাকে না।  দুধ সঠিকভাবে শিশুকে খাওয়ালেই তার খিদে তেষ্টা সবই মিটে যেতে পারে।  তাও কোনও সমস্যা মনে হলে কোনও চিকিৎসকের সাথে কথা বলা যেতে পারে।

জানুন ডাক্তারবাবু আরও কী বলছেন এ নিয়ে…

 

দ্য ওয়াল : সলিড খাবার যখন দেওয়া হয়, তখনও কি দুধ দেওয়া যেতে পারে?
ডাঃ মুদুলি: সাধারণত দু’বছর বয়স পর্জন্ত সলিড খাবারের সাথেও মায়ের দুধ দেওয়া যেতে পারে।  অনেকক্ষেত্রে তিন বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ সন্তানকে দেওয়া যেতেই পারে।

দ্য ওয়াল : দিনে ক’বার দুধ খেতে চাইতে পারে একটি শিশু?
ডাঃ মুদুলি: সারাদিনে শিশু নিজের ইচ্ছে মতো যতবার খুশি দুধ খেতে চাইতে পারে।  তবে সাধারণত দু’বার স্তন্য পানের মাঝে দু ঘণ্টার বেশি গ্যাপ থাকা উচিত নয়।

দ্য ওয়াল : শিশু খেতে চাইলেই খেতে দেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ডাঃ মুদুলি:
শিশু খেতে চাওয়ার অর্থ শিশু ক্ষুদার্ত আছে।  শিশুরা তো এমনি বলতে পারে না।  তাদের কান্না বা ঘ্যানঘ্যানে ভাব দেখে মাকেই বুঝতে হবে যে এবার তার খাওযার সময় হয়ে গেছে।

দ্য ওয়াল : প্রতিবার কতক্ষণ করে খাওয়ানো উচিত?
ডাঃ মুদুলি: প্রতিবার এক এক দিকে স্তন থেকে কমপক্ষে কুড়ি তিরিশ মিনিট স্তন্য পান করানো প্রয়োজন।

দ্য ওয়াল : বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে কিনা তা মা বুঝবেন কী করে?
ডাঃ মুদুলি: শিশুর ঘুম এবং শারীরিক বৃদ্ধি যদি পর্যাপ্ত হয় এবং শিশু ২৪ ঘণ্টায় ৬ থেকে ৮ বার মূত্র ত্যাগ করে তাহলে বুঝতে হবে শিশু যে পরিমাণ দুধ খাচ্ছে, তা যথেষ্ট।

দ্য ওয়াল : আজকাল অনেক মা চাকরি করতে বেরিয়ে পড়েন, অনেকেই দুধ স্টেরিলাইজ়ড বটলে রেখে যান।  স্তন থেকে বের করে রাখা দুধ কতক্ষণ ভাল থাকে?
ডাঃ মুদুলি: স্তন থেকে বের করে রাখা দুধ ভারতীয় আবহাওয়ায় sterilized বোতলে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা ভালো থাকে, তার বেশি কিন্তু নয়।

দ্য ওয়াল : বুকের দুধ দেওয়ার সময় মায়ের কেমন খাওয়া-দাওয়া করা উচিত?
ডাঃ মুদুলি: বুকের দুধ দেওয়ার সময় স্বাভাবিক খাবারের থেকে অতিরিক্ত ৫০০ কিলো ক্যালোরি খাবার খাওয়া উচিত একজন মায়ের।  খাবারের মধ্যে শাক, সবজি, ফল মূল, এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি থাকা উচিত।  উদাহরণস্বরূপ মা যদি আগে চারটে রুটি খেত তাহলে শিশু জন্ম দেওয়ার পরে পাঁচটি রুটি খাওয়া উচিত মায়ের।

দ্য ওয়াল : অনেক মায়ের দুধের পরিমাণ কম থাকে, তাঁরা কৌটোর দুধে কতটা ভরসা করতে পারেন? একজন মা বুকের দুধ তৈরির পরিমাণ বাড়াতে পারেন কী করে?
ডাঃ মুদুলি:
মায়ের বুকের দুধ কম হলে সে ক্ষেত্রে কৌটার দুধের ওপর নির্ভর করতে হবে,।কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।  বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর আহার এবং জলপান করা অত্যন্ত জরুরি।  এছাড়া মা ও বাচ্চা একসাথে থাকলে kangaroo mother care করলে এবং ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ালে বুকের দুধের পরিমান বৃদ্ধি পায়।

দ্য ওয়াল : বুকের দুধ দেওয়ার সময় মায়ের কোন ওষুধগুলো পরিহার করা উচিত?
ডাঃ মুদুলি:
স্তন্যদানের সময় ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত।  সাধারারণত অ্যান্টি ক্যানসার ড্রাগ, অ্যান্টি মেটাবলাইটিস, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক এবং হরমোনের ওষুধের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে।

দ্য ওয়াল : বাচ্চা বুকের দুধ না খেতে চাইলে মা কী করবেন?
ডাঃ মুদুলি:
সর্বপ্রথম মাকে আশ্বস্ত করা উচিত।  দেখা উচিত বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি সঠিক হচ্ছে কিনা, বা মায়ের স্তন বা স্তনবৃন্তের কোনও সমস্যা আছে কিনা।

দ্য ওয়াল : অনেক বাচ্চার এই দুধের নেশার মতো হয়ে যায়, কিছুতেই ছাড়ানো যায় না।  তাদের কী ভাবে এই দুধের নেশা ছাড়ানো যায়?
ডাঃ মুদুলি: মা যতদিন সচ্ছন্দ বোধ করবেন ততদিন স্তনপান করাতে পারেন।  দুধের নেশা ছাড়ানোর জন্য কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।  সাধারণত শিশু বড় হলে এবং স্কুলে যাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে স্তন্যপান বন্ধ করে দেয়।

দ্য ওয়াল : কত দিন পর থেকে একটি শিশুর আর মায়ের দুধের প্রয়োজন থাকে না?
ডাঃ মুদুলি: সাধারণত দু’বছর পর শিশুর আর মায়ের দুধের প্রয়োজন থাকে না।

দ্য ওয়াল : মায়ের দুধে কী কী গুণ থাকে, যা বাচ্চার জন্য জরুরি?
ডাঃ মুদুলি: মায়ের দুধে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, অ্যান্টিবডি, ডিএইচএ, এন্জাইম থাকে, যা বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধির সাথে মস্তিষ্কে বৃদ্ধি, পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সাহায্য করে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মধুরিমা রায়

You might also like