শেষ আপডেট: 30th November 2023 16:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যখন তখন হুড়মুড়িয়ে হানা দেবে না তো হার্টের রোগ?
আজ বুকে ব্যথা হচ্ছে, কাল হার্ট অ্যাটাক হবে না তো?
হার্টের রোগ এখন ঘরে ঘরে। হাঁটতে, চলতে, উঠতে-বসতে, জিম করতে গিয়ে, নাচতে গিয়ে কখন যে আচমকা হার্টের স্পন্দন থেমে যাবে তা হয়ত ব্রহ্মাই জানেন। হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে যখন তখন। চুপিসাড়ে আসছে, সব শেষ করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে কিনা তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে কোনও কিছু অসম্ভব নয়। আগামী ১০ বছরের মধ্যে আপনার হৃদপিণ্ড বিগড়ে যাবে কিনা তার আগাম খবর দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পরিচালিত যন্ত্র।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এমন যন্ত্র তৈরি করেছেন। গবেষকদের সাহায্য করেছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন। ওই এআই যন্ত্র তৈরিতে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টদেরও বড় ভূমিকা আছে।
এআই পরিচালিত ওই যন্ত্র কার্ডিয়াক কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি)স্ক্যান করে বলে দিতে পারে আগামী ১০ বছরের মধ্যে হার্টের অবস্থা কেমন হবে, হার্ট ফেলিওর বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে কিনা। ৪০,০০০ হার্টের রোগীর উপর এই স্ক্যান করা হয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি কিংবা যাঁদের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। হার্ট অ্যাটাক যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে হতে পারে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক নানাভাবে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এরও শিকার হন অনেকে। ইদানীংকালে হচ্ছেনও। এই প্রকারের অ্যাটাকে সব রকম উপসর্গ দীর্ঘ সময় ধরে আসে। এই উপসর্গগুলি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্য রোগের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। অনেক সময়ে এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকে সে ভাবে কোনও ব্যথাও অনুভব করেন না রোগী। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঘটে যায় হার্ট অ্যাটাক। আচমকাই আসে, বাঁচানোর সময়টুকু পাওয়া যায় না।
বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকে বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে অস্বস্তি হয় যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা তারপর চলে যায় এবং আবার সেই ব্যথা কিছুক্ষণ পরে ফিরেও আসে। বুকে ব্যথা মানেই যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে তা নয়। আবার এমন অনেক উপসর্গ আছে যা রোগীরা এড়িয়ে চলেন। ফলে তলে তলে হার্টরেট কমতে থাকে, ব্লকেজ হয় করোনারি ধমনীতে। রোগ যখন ধরা পড়ে ততদিনে হার্টের হাল হয়ত বেহাল হয়ে গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই প্রথম এমন যন্ত্র এনেছে যা আগে থেকেই বলে দিতে পারবে হার্ট অ্যাটাক কখনও হবে কিনা।
বিশ্বজুড়েই এই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চলছে। ভারতে কোচির অমৃতা হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. জয়দীপ মেনন বলেছেন, এআই পরিচালিত সিটি করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে বলা যায় রোগীর ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে কিনা। হার্টের অবস্থা কী হতে চলেছে তাও স্ক্যান করে ধরতে পারে এই যন্ত্র। ডাক্তারবাবু বলছেন, এভাবে যদি আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে রোগীর হার্টের চিকিৎসা আগে থেকে করা সম্ভব হবে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম করেও ৪০ শতাংশ কমবে, কমবে মৃত্যু হারও।
গবেষকদের দাবি, হার্টবিট, পালস রেট, শিরা ও ধমনীতে রক্তের প্রবাহ ও রক্তচাপ মেপে সেই যন্ত্র সঠিকভাবে বলতে পারে হার্টের অবস্থা কেমন। এই যন্ত্র বলে দিতে পারে, হার্টের ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা। কোনওরকম ব্লকেজ তৈরি হয়েছে কিনা তাও ধরতে পারে এই যন্ত্র। হৃৎপিণ্ডের শিরা ও ধমনীতে রক্তের প্রবাহ ও রক্তচাপ বিশ্লেষণ করে এই যন্ত্র নির্ণয় করতে পারে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা। ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের মতো যন্ত্র যেখানে বিফল হয়, সেখানে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এই যন্ত্র। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের উপর এই যন্ত্রের ট্রায়াল শুরু হয়েছে।