শেষ আপডেট: 19th September 2024 13:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রথমে পেজার, পরদিন ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে লেবাননের হিজবুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দিলেও ইজরায়েলের চর সংস্থা মোসাদের এই কাজে আরব দুনিয়ায় বারুদের স্তূপে অগ্নিসংযোগ হচ্ছে না তো! কারণ এই ঘটনার পরপরই আমেরিকা ইরানকে ধৈর্য ধরতে ও সংযত থাকার অনুরোধ পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞদের মতে, গোপন পথে, আড়াল থেকে হিজবুল্লা জঙ্গিদের পাঁজরে আঘাত হানাকে ইজরায়েলের মোসাদের কৌশলগত জয় মনে হলেও দূরবর্তী ভাবনায় এটা ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে গড়াতে পারে। পেজার-ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের গপ্প নিয়ে হলিউড চিত্রনাট্য তৈরিতে বসে পড়লেও লেবাননি জঙ্গিরা এই অপদস্থ-অপমানকে সহজে মেনে নেবে না। এই পথে তাদের রোখা সম্ভব নয়। এমনকী অনেকের ধারণা, ইজরায়েলের এই কর্মকাণ্ডের ফলে ইরানের নেতৃত্ব প্রতিরোধের মেরুকরণে এই অঞ্চলে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধতে পারে।
ইজরায়েল এই পদ্ধতিতে হিজবুল্লার হামলা ঠেকাতে পারবে না এবং গত একবছর ধরে ৬০ হাজার ইজরায়েলি যাঁরা উত্তর সীমান্ত এলাকায় ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁদের ঘরে ফেরাতে পারবে না। ইজরায়েল যে এইরকম অত্যাধুনিক ও অভিনব পন্থা নেবে তা আমেরিকাকেও জানাননি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অথবা মার্কিন চর সংস্থাও টের পায়নি। ইজরায়েলের নিশানার মূল লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা এবং লেবাননের উপর তাদের কর্তত্বকে খর্ব করা।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলে হামাস বাহিনীর হামলার পর থেকে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হিজবুল্লাকে খতম করার শপথ নিয়েছেন। কারণ এই জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাদের ক্রমাগত রকেট আক্রমণে উত্তর ইজরায়েল থেকে ৬০ হাজার লোক উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
এই ঘটনার পরপরই হিজবুল্লা জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলার জবাব ইজরায়েলকে কড়ায়গণ্ডায় শোধ দেবে তারা। তবে কীভাবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। হিজবুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে বিশাল সেনা সরঞ্জাম ও রসদ আছে। যা দিয়ে তারা উত্তর ইজরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়ে যেতে পারে। শুধু উত্তর ইজরায়েল নয়, ইহুদি রাষ্ট্রের অন্যত্র এমনকী তেল আভিভেও আছড়ে ফেলতে পারে ক্ষেপণাস্ত্র।
২০০৬ সালের যুদ্ধে হিজবুল্লারা তাদের এই ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছিল ইজরায়েলকে। ৩৪ দিনে সেই যুদ্ধে ১৬৫ জন ইজরায়েলির মৃত্যু এবং দেশের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পকে আধমরা করে দিয়েছিল হিজবুল্লারা। সেবার লেবানন ও হিজবুল্লার আরও বড় ক্ষতি হলেও তাদের নির্মূল করা যায়নি। ফলে এখন যদি হিজবুল্লা ইজরায়েলের ভিতরে কোনও হামলা চালায় এবং তাতে নিরীহের মৃত্যু হয়, তাহলে নেতানিয়াহুরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। সেক্ষেত্রে হিজবুল্লা ও পরোক্ষে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া অনিবার্য হয়ে পড়বে। এবং সেক্ষেত্রে আমেরিকা ও ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ নিশ্চিতভাবেই ইজরায়েলের পক্ষ নিলে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হবে।
হিজবুল্লার সম্পূর্ণ মদত ও রসদ আসে তেহরান থেকে। তবে এদের প্রতি সমর্থন রয়েছে ইরাকি জঙ্গি, ইয়েমেনি হুতি এবং সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সহ আরও বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীর। ফলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে একদিকে মুসলিম দুনিয়া অন্যদিকে আমেরিকা-ইজরায়েলের মেরুকরণ হয়ে যাবে।