শেষ আপডেট: 18th March 2025 18:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ৯ মাস মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামসরা (Sunita Williams)। সব ঠিক থাকলে ভারতীয় সময়ে বুধবার ভোর সাড়ে ৩টের কিছু পর ল্যান্ড করার কথা তাঁদের রকেটের (Space X)। কিন্তু স্পেস স্টেশন (ISS) থেকে পৃথিবীর মাটিতে অবতরণ করা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। রয়েছে যথেষ্ট ঝুঁকি। তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য।
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, স্পেস স্টেশন থেকে বেরনোর পর পৃথিবীতে ল্যান্ড করতে সুনীতাদের ১৭ ঘণ্টা সময় লাগবে। কেন এত সময় লাগছে, সে নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গত বছর রাশিয়ার সোয়ুজ (Soyuz) তিন মহাকাশচারীকে নিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, যে পথ অতিক্রম করতে ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছিল, তা পার করতে সুনীতাদের কেন ১৭ ঘণ্টা সময় লাগছে?
বিশেষ কিছু কারণের জন্যই এত সময় নিয়ে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে যাতে রকেটের কোনও বিপদ না ঘটে সেটা নিশ্চিত করা। আসলে নাসা-স্পেস এক্সের রকেট এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে সেটি ধাপে ধাপে কক্ষপথ ছাড়ে। নির্দিষ্ট জায়গায় অবতরণের আগে ট্রাঙ্ক থেকে পৃথক হতে হবে সেটিকে। শেষকালে পারাশুট ব্যবহার করে মহাকাশচারীদের অবতরণ করানো হবে।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন মহাকাশে স্থির অবস্থায় থাকে না। নাসার হিসেব বলছে, সেটি ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে এবং ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতা দিয়ে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। তাই কক্ষপথ থেকে ধীর গতিতেই বেরোতে হবে স্পেস-এক্সের রকেটকে। এদিকে যে সময়ে আমেরিকায় অবতরণ করার কথা সুনীতাদের রকেটের, সে সময়ে টর্নেডোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আরও বাড়তি সতর্ক নাসা।
স্পেস স্টেশন থেকে ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুনীতাদের উদ্ধারকারী মহাকাশযান। দ্বিতীয় ধাপে মহাকাশযানের ট্রাঙ্ক এবং ক্যাপসুল আলাদা হবে। বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পরই ট্রাঙ্কটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, ক্যাপসুল নেমে আসবে নীচের দিকে। তৃতীয় ধাপে কক্ষপথ ছাড়ার পর চতুর্থ ধাপে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে সুনীতাদের ক্যাপসুল। সবথেকে কঠিন সময় এটিই। কোনও বাধা ছাড়া বায়ুমণ্ডলে ক্যাপসুল প্রবেশ করে গেলেই ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর পঞ্চম ধাপে ক্যাপসুলটিকে দুটি পারাশুটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ষষ্ঠ ধাপে আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবতরণ করানো হবে সুনীতাদের।
এখানেও কাজ শেষ নয়! সুনীতাদের ল্যান্ডিং হবে প্রশান্ত মহাসাগরে। সেখানে থাকবে স্পেস-এক্সের একটি জাহাজ। তারাই উদ্ধার করবে সুনীতা এবং উইলিয়াম বুচকে। তবে সরাসরি বাড়ি যেতে পারবেন না কেউই। দুজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হবে কোয়ারেন্টিনে। সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকতে হবে তাঁদের।
কেন এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না কেউ?
দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার কারণে শারীরিক নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় মহাকাশচারীদের। সুনীতারাও ব্যতিক্রম নন। তাই এতদিন মহাকাশে থাকার কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারবেন না তাঁরা। পাশাপাশি মহাকাশ থেকে নতুন রোগ নিয়ে আশার আশঙ্কা থাকে, অন্যদিকে পৃথিবীর জীবাণুতেও সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের। তাই কোয়োরেন্টিনই একমাত্র উপায়।