শেষ আপডেট: 24th July 2024 19:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফের বিমান দুর্ঘটনার সম্মুখীন নেপাল। আজ, বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ভেঙে পড়েছে একটি যাত্রীবাহী বিমান। ওই বিমান ক্রু সদস্য নিয়ে মোট ১৯ জন ছিলেন। পাইলট ছাড়া বাকি ১৮ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়ার জন্য টেক অফ করছিল শৌর্য্য এয়ারলাইন্সের বিমানটি, সেই সময়েই ঘটে মর্মান্তিক কাণ্ড। বিমান ভেঙে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে যায়।
নেপালে এই বিমান দুর্ঘটনা যেন ক্রমেই বাড়ছে। বিমান দুর্ঘটনা আর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় সেখানে। গত বছরের শুরুতেই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় নেপাল। পোখরায় বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৭২ জন। এর আগেও বহুবার এই দেশ এমন দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। তথ্য বলছে, ১৯৬২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৫টি ছোট-বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে নেপালে। প্রাণ গেছে প্রায় হাজার মানুষের।
মূলত এই দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটে। রানওয়ে ছোট, চারধারে খাদ, পাহাড় ঘিরে রয়েছে গোটা জায়গা-- সব মিলিয়ে এই রোমহর্ষক টেরেনে বিমান ওড়ানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। তার সঙ্গে দোসর হল, খামখেয়ালি আবহাওয়া। খুব ঘনঘন আবহাওয়ার ওঠাপড়া বিপদ আরও বাড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এমনিতেই উচ্চতার কারণে বায়ুর চাপ থাকে কম, যে জন্য এয়ারক্রাফ্টের ইঞ্জনে অনেক বেশি জোর লাগে। তার উপর হাওয়ার গতি থেকে গতিমুখ এত দ্রুত বদলায়, পাইলটদের পক্ষে বিমান নিয়্ন্ত্রণ করাই কঠিন।
এভিয়েশন ভ্লগার স্যাম চুই-এর কথায়, 'কাঠমাণ্ডু অর্থাৎ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কাঠমাণ্ডু উপত্যকায় অবস্থিত। বিমানবন্দরের চারদিকে বড় বড় পাহাড়। কেবল দক্ষিণ দিক দিয়েই এই বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট ওঠা-নামা করতে পারে। টার্মিনালটি এমন কিছু বড়ও নয়। একটি মাত্র রানওয়ে রয়েছে, যাতে অনেক বাম্পও আছে। সেখান থেকেই চল্লিশের বেশি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল করে রোজ। যদিও রানওয়েটি ৩০০০ মিটার লম্বা, ফলে সমস্ত বিমানই এখানে নামতে পারে, তবে তা মোটেই সবসময় নিরাপদ নয়।'
কাঠমাণ্ডু তো বটেই, তথ্য বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিমানবন্দরও রয়েছে এই দেশেই। লুকলা বিমানবন্দর বা তেনজিং-হিলারি এয়ারপোর্ট। অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক এই বিমানবন্দর সোলুখুম্বু জেলার লুকলায় অবস্থিত। এই বিমানবন্দর থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর পর্বতাভিযান শুরু হয়। মাউন্ট এভারেস্ট বেস ক্যাম্প যাওয়ার জন্য এখানেই এসে পৌঁছতে হয়।
প্রতিদিন কাঠমাণ্ডু থেকে লুকলার ফ্লাইট যাতায়াত করে। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই বাতিল হয় বিমান। কারণ একটু এদিক-ওদিক হলেই, এই বিমানবন্দরে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সূর্য ডুবে গেলে এখানে বিমান চলাচল করে না। অতি দক্ষ পাইলট ছাড়া এখানে বিমান চালানোর অনুমতি কাউকে দেওয়া হয় না।
হিমালয়ের কোলে ৯,৩৩৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই বিমানবন্দর। এর রানওয়ে দৈর্ঘ্যে ১,৭২৯ ফুট এবং প্রস্থে ৯৮ ফুট।। চারপাশে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীর খাদ। রানওয়ের কারণেই এই বিমানবন্দর আরও বেশি বিপজ্জনক। তাছাড়া উচ্চতার কারণে এখানে উন্নতমানের ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমও নেই।
বিশ্বের বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় নেপালের পোখরাও রয়েছে। ১৯৫৮ সালে তৈরি করা হয় এটি। এই বিমানবন্দরটিও পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এবং সংকীর্ণ রানওয়ের কারণে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।