শেষ আপডেট: 23rd December 2024 15:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিরিয়ার ফেরারি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সিরীয়-ব্রিটিশ স্ত্রী আসমা আল-আসাদ স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা ঠুকলেন। কারণ, সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে বেজায় চটেছেন আসমা। তাঁর পছন্দের ছিল জন্মভূমি লন্ডন। শুধু তাই নয়, মস্কোয় থাকা নিয়েও মনোমালিন্য চলছে বাশার-আসমার। তাই হাফিজ, জেইন এবং করিম নামে তিন সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছেন।
তুর্কি ও আরবি সংবাদমাধ্যমগুলির খবর, আসমা আল-আসাদ চেয়েছিলেন তাঁর জন্মস্থান লন্ডনে যেতে। কিন্তু, রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ায় আসাদ পরিবার মস্কোতেই চলে গিয়েছিলেন। সিরীয় বাবা-মার সন্তান আসমার জন্ম লন্ডনেই। ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করে ২০০০ সালে তিনি বাশারের সঙ্গে সিরিয়ায় চলে আসেন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আসমা রুশ আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে স্বামীকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার বিশেষ অনুমতি চেয়েছেন। রাশিয়ার বিচারবিভাগ ও প্রশাসন তাঁর আবেদন আপাতত খতিয়ে দেখছে। এ মাসের গোড়ার দিকে সিরিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানের ফলে দেশ ছেড়ে সপরিবারে পালিয়ে যান আসাদ। জেরুজালেম পোস্টের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া সরকার বাশার আল-আসাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২৭০ কেজি সোনা, ২০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং মস্কোয় ১৮টি বাড়ি-ফ্ল্যাট।
কে আসমা আল-আসাদ?
বিয়ের আগের নাম আসমা আল-আখরাস। জন্ম ১১ অগস্ট, ১৯৭৫ সাল। তাঁর মা ছিলেন সিরীয় কূটনীতিক। বাবা লন্ডনের একজন কার্ডিওলজিস্ট। ১৯৯৬ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে স্নাতক হন। তিনি কম্পউটার সায়েন্স এবং ফরাসি সাহিত্যে স্নাতক হন। শুরুতে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিংয়ে কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
বাশারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় লিবিয়া সফরের সময়। ২০০০ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় চলে আসেন। সৌন্দর্য, আকর্ষণ এবং ভালো মেলামেশার জন্য সুখ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে। আসমাকে সিরিয়ার যুবরানি ডায়ানা নামেও ডাকা হতো তাঁদের বিয়ের সময়।
খ্যাতি-কুখ্যাতি
বর্তমানে ৪৯ বছর বয়সি আসমাকে একসময় মধ্য-পূর্বের অর্থাৎ আরব দুনিয়ার নারীমুক্তির মুখ বলে মনে করা হতো। ২০১১ সালে ভগ পত্রিকায় তাঁর ছবি ছাপা হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী ফার্স্ট লেডি হিসেবে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর অনুযায়ী, বিয়ের পর থেকেই তিনি দ্রুত অভিজাত সমাজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পৌঁছে যান। আবার গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় বিলাসবৈভবের শিখরে বাস করা নিয়েও বারবার সমালোচনায় আঁচড় লেগেছে গায়ে। ২০১২ সালের একটি পরিসংখ্যান বলছে, সেই সময় আসমা প্রাসাদের অন্তর্সজ্জায় সাড়ে ৩ লক্ষ ডলার খরচ করেছিলেন। ক্রিস্টাল বসানো জুতো এবং অন্যান্য কিছু অলংকার সামগ্রীর জন্য সাত হাজার ডলার খরচ করেছিলেন।
সিরিয়ার উপর মার্কিন অবরোধ চালুর সময়েও আসমা ভায়া দুবাই ইউরোপীয় সামগ্রী আনাতেন। শুধু বিলাসে দিন কাটানোর জন্যই দেশের অর্থনীতিতেও প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করতেন প্রেসিডেন্ট পত্নী। দেশের অর্থনৈতিক কমিটির উপর তাঁর ছড়ি ঘোরানোর জন্যই দেশের দুরবস্থাকে অনেকে দায়ী করেন। সিরিয়ার খাদ্য ও জ্বালানি ভরতুকি এবং বাণিজ্য-মুদ্রানীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তেও নাক গলাতেন আসমা।