শেষ আপডেট: 7th January 2025 16:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিতা আনন্দ। ব্রিটেনের ঋষি সুনকের পর কানাডার শীর্ষ পদে বসতে চলেছেন আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত? বর্তমানে কানাডার পরিবহণ মন্ত্রী অনিতা জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে কোভিড ১৯ টিকাকরণে অতীতে সাফল্য দেখিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ইউক্রেনকে সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীদের ইস্যুর সমাধান করেছিলেন। সেই ভারতীয় রক্তই এবার জাস্টিন ট্রুডো পরবর্তী কানাডার রাজদণ্ড হাতে নেওয়ার ইঁদুর দৌড়ে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন।
গতকাল, সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ এবং শাসকদল লিবারেল পার্টির প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন জাস্টিন ট্রুডো। এবছরেই কানাডায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাধারণ নির্বাচন। আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের অদৃশ্য চাপে, ইলন মাস্কের নেপথ্য কলকাঠি নাড়াচাড়ায় ভোটে নিশ্চিত পরাজয় জেনে আগেভাগেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ট্রুডো। তাঁর কথায়, কানাডার মানুষের ভালোর জন্য তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন।
কানাডার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু, সেই সম্পর্কেই মরচে পড়তে শুরু করে যখন ট্রুডো ভারতে নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী সংগঠনের সদস্যদের তাঁর মন্ত্রিসভায় স্থান দেন। ২০২৩ সালের জুনে খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের পর দুদেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ট্রুডো আচমকা ভারতীয় পড়ুয়াদের ভিসায় নানান বিধিনিষেধ জারি করেন। ভারতের সঙ্গে ট্রুডোর এই বৈরিতা নিয়ে তিনি নিজের দলের ভিতরেই সমালোচিত হতে শুরু করেন। লিবারেল পার্টির ২০ জনের বেশি নেতা প্রকাশ্যে তাঁর ইস্তফার দাবি তোলেন।
পদত্যাগ করে ট্রুডো দেশের গভর্নর জেনারেলকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত, যতক্ষণ না লিবারেল পার্টি তার নতুন দলনেতা নির্বাচন করছে, তত দিন পার্লামেন্ট মুলতুবি ঘোষণার আর্জি জানান। তাঁর পদত্যাগের সঙ্গেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মুখ নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনিয়েছে। আপাতত অন্তত আটজন রয়েছেন এই দৌড়ে। এরমধ্যে দুজন হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তারমধ্যেও পরিবহণ মন্ত্রী অনিতা আনন্দ হলেন প্রথম পাঁচে থাকা সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী মুখ।
কে এই অনিতা আনন্দ?
৫৭ বছর বয়সি অনিতা আনন্দ তামিলনাড়ুর মহিলা। পরিবহণ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মন্ত্রী ট্রুডো মন্ত্রিসভার। আগে জনস্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। টরন্টোর ওকভিলে-র পার্লামেন্ট সদস্য অনিতা ২০১৯ সালে রাজনীতে এসেই লিবারেল পার্টির নেতৃস্থানীয় পদমর্যাদায় পৌঁছে যান। অনিতা কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। অনিতার জন্ম কেন্টভিলে-তে। তাঁর মা সরোজ ডি রাম এবং বাবা এসভি আনন্দ দুজনেই ডাক্তার। অনিতার দুই বোন রয়েছে। তাঁদের নাম গীতা এবং সনিয়া আনন্দ।
অনিতা আনন্দ ছাড়া আর কে কে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়া দৌড়ে?
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড রয়েছেন এই তালিকায়। ৫৬ বছর বয়সি ক্রিস্টিয়া দেশের প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী। ট্রুডোর কাছের লোকদের অন্যতম। তবে গত ডিসেম্বরে আচমকাই নেতৃত্ব ও প্রশাসন পরিচালন নীতির বিরোধিতা করে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ট্রুডোর তিক্ত বাণিজ্যনীতি নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন ফ্রিল্যান্ড। ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রাক্তন সাংবাদিক ফ্রিল্যান্ড আগে দেশের অর্থমন্ত্রীও ছিলেন। ৫৯ বছর বয়সি মার্ক কার্নে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা। এরপরে রয়েছেন ফ্র্যাঙ্কোইজ ফিলিপ শাম্পেন। ৫৪ বছর বয়সি শাম্পেন একজন ব্যবসা বিশেষজ্ঞ তথা রাজনীতিক। ৪৫ বছর বয়সি মেলানি জোলি ট্রুডো সরকারের বিদেশমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী ৫৭ বছর বয়সি দোমিনিক লেব্ল্যাঙ্কের নামও আলোচিত হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ৫৯ বছরের ক্রিস্টি ক্লার্ক।