শেষ আপডেট: 2nd December 2024 18:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে চলতি অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সে দেশে শান্তি বাহিনী (Peacekeeping Force) পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘আমি কেন্দ্রের কাছে আবেদন করছি, যাতে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জকে বলে যে বাংলাদেশে একটা পিস কিপিং ফোর্স পাঠানো হোক।’
এক কথায় বলতে গেলে, শান্তিরক্ষী বাহিনী হল এমন একটি বাহিনী, যা বিভিন্ন দেশের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার এবং যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে।
এই বাহিনী সাধারণত জাতিসংঘ (United Nations, UN) বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা সংগঠিত হয়। এতে সমস্ত দেশের সেনাবাহিনীরই অংশ থাকে। এটি যুদ্ধ বা সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে শান্তি স্থাপন করতে সহায়তা করে।
শান্তিরক্ষী বাহিনীর ধারণা প্রথম গড়ে ওঠে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। এই সময়েই জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয় (১৯৪৫)। এর পরে প্রথম শান্তিরক্ষী মিশন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে, যখন জাতিসংঘ কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে বাহিনী পাঠিয়েছিল।
তবে, শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের প্রকৃত ধারণা এবং তাদের কার্যক্রমের পথপ্রদর্শক ছিলেন নরওয়ের জন হেনরি ড্যাগ হ্যামারশোল্ড, যিনি জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শান্তিরক্ষী বাহিনী শুধুমাত্র সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে নয়, বরং সংঘাতের ঝুঁকি মেটাতে প্রাথমিক পর্যায়েও কার্যকর হতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শান্তিরক্ষী বাহিনী যুদ্ধ বা সংঘর্ষের অঞ্চলে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, তবে তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শান্তিপূর্ণ সমাধান উদ্ভাবন এবং সংঘাতের উৎসে সুরাহা খুঁজে বের করা।
শান্তিরক্ষী বাহিনী নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করে। তাদের কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে:
এছাড়া, শান্তিরক্ষী বাহিনী এমনকি যুদ্ধ-বিরতির সময়ে সীমারেখা তৈরি করার কাজেও অংশ নেয়। এ সময়ে তাদের সেনারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকেন, যাতে তাঁরা কোনও পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করেন।
বিভিন্ন সময়ে শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশ্বব্যাপী নানা স্থানে কর্মরত ছিল। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশন হলো:
শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশ্বজুড়ে যতটা সফল হয়েছে, ততটাই তাদের কার্যক্রম নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা হয়েছে। কখনও কখনও তারা তৎপরতার অভাবে অথবা নিরপেক্ষতার কারণে যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যখন তারা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে পাঠানো হয়।
শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশ্ব শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। যুদ্ধ ও সংঘাতের পরেও যদি সঠিক সময় এবং উপায় অবলম্বন করা হয়, তবে তারা পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, তাদের কাজ সবসময় সহজ নয়, কারণ প্রতিটি মিশনই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে থাকে।