শেষ আপডেট: 11th December 2024 14:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইজরায়েল নতুন করে পড়শির জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত রবিবার আল-আসাদের নাটকীয় পলায়নের পর থেকে সিরিয়ার বুকে নিদেনপক্ষে ৪৮০ বার হানাদারি চালিয়েছে ইহুদি রাষ্ট্র। ১৫টি ছোটবড় জাহাজ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে ১৯৭৪ সাল থেকে দুদেশের সীমানার বিতর্কিত এলাকায় সেনা অভিযান চালিয়েছে।
ইজরায়েলের এই আগ্রাসী মনোভাব এমন সময়ে শুরু হয়েছে, যখন সিরিয়ার ৫৩ বছরের স্বৈরাচারী বংশের শাসন খতম হল তখন। বেশ কিছুকাল ধরে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী আরেক পড়শি দেশ লেবাননে হিজবুল্লা জঙ্গি খতমের নামে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, হামাস জঙ্গি নিকেশের নামে প্যালেস্তাইনের গাজা উপসাগরীয় এলাকায় একের পর এক হানা চালাচ্ছে। এদিনও ইজরায়েলি বাহিনী উত্তর ও গাজা খাঁড়ি এলাকায় বোমাবর্ষণ করে। এবং তাতে অন্তত ৩১ জন প্যালেস্তিনীয় মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
ইজরায়েল কেন সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে?
ইজরায়েল প্রথম থেকে যুক্তি দেখিয়ে যাচ্ছে যে, তারা সিরিয়ার বুক থেকে ইরানি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি চুনকাম করে দিতে চায়। অন্যদিকে, ইরানের দাবি সিরিয়ায় তাদের কোনও সেনা ঘাঁটি বর্তমানে নেই। এখন ইজরায়েল দাবি তুলছে, তারা সেদেশ থেকে সিরীয় সেনা পরিকাঠামো মুছে ফেলতে চায়।
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের দাবি, তারা চায় না সিরিয়ার যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র, যার মধ্যে রাসায়নিক অস্ত্রও রয়েছে, সেসব জঙ্গিদের হাতে চলে যাক। যা হস্তান্তরিত হতে পারে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনে আইসিসের খপ্পরে। তবে তারা আপাতত উগ্রবাদী বলতে সিরিয়ায় বিদ্রোহ গড়ে তোলা ও আসাদের পতনের নায়ক আল-জোলানির সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম-এর হাতে যাতে অস্ত্রভাণ্ডার চলে না যায়, সেই অজুহাত খাড়া করছে।
ইজরায়েল জানিয়েছে, তারা সিরিয়ায় সেনা শিবির, অস্ত্রভাণ্ডার, গোলাবারুদে গুদাম, নৌঘাঁটি এবং গবেষণাগারে হামলা চালিয়েছে। সিরিয়া-ইজরায়েলের সীমারেখার বিতর্কিত এলাকা গোলান শিখরে সেনা ঘাঁটি গড়ে রেখেছে। যদিও ১৯৭৪ সাল থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী এই এলাকাটি সেনা-শূন্য থাকার কথা। সেই চুক্তিকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে আমেরিকার মাতব্বরিতে ইজরায়েল সরকার।
সিরিয়া প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্বত্য এলাকা গোলান শিখর থেকে ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক সিরিয়ার কবজায় থাকা কাতানার দিকে এগচ্ছে। যা রাজধানী দামাস্কাসের খুব কাছাকাছি। যদিও ইজরায়েল এই দাবি অস্বীকার করেছে। কিন্তু সিরিয়া থেকে ইজরায়েল কী অধিকার করতে চায়? তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনেও ইজরায়েলের রাজনৈতিক ফন্দি রয়েছে।
তাঁদের অনেকের মতে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি ইজরায়েলের কাছে একটা সোনালি সুযোগ মেলে ধরেছে। দেশের নীতি নির্ধারকরা এখনই সিরিয়ার দ্রুজ, কুর্দ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। কারণ এই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সশস্ত্র বিদ্রোহ করে আসাদ জমানার পতনে বিরোধী ছিল। এক গবেষক তথা প্রাক্তন ইজরায়েলি সেনাকর্মী জানান, হতে পারে সিরিয়া এরপর ছোট ছোট সম্প্রদায়গত প্রদেশে ভেঙে যাবে। এবং প্রতিটি ক্ষুদ্র এলাকার অধিকার থাকবে তারা ইজরায়েল সহ বহিঃশক্তির সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখে চলবে। সিরিয়ার সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের এক সদস্য প্রাক্তন কর্নেল আনান ওয়াহাবি বলেন, আরব দুনিয়ায় আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের কাজ ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে।