মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শেষ আপডেট: 8th March 2025 08:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) তাঁর পরম বন্ধু। সেই বন্ধু সম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে একদা আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের নামে স্লোগান তুলতেও কুন্ঠা করেননি তিনি।
শুক্রবার ওভাল অফিসে বসে সেই ট্রাম্পই জানালেন, ওয়াশিংটনের চাপে আপসে রাজি নয়াদিল্লি। শুল্ক কমানোর প্রশ্নে অনেকটাই নত করা গেছে ভারতকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন দাবি নিয়ে শনিবার এ দেশের ঘরোয়া রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উথালপাথাল শুরু হতে পারে বলে অনেকে এরই মধ্যে আন্দাজ করতে শুরু করেছেন।
কী বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?
ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেছেন যে ভারত তাদের শুল্ক "অনেক কমিয়ে" দিতে রাজি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “ভারত আমাদের উপর বিপুল শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে। এত চড়া শুল্ক হার যে ওখানে কিছুই বিক্রি করাই যায় না। ওখানে আমাদের ব্যবসা খুবই কম। এটা প্রায় নিষিদ্ধ (পড়ুন মার্কিন পণ্য) করার মতোই ব্যাপার। তবে এটা নিয়ে হইচইয়ের পর এখন ওরা শুল্ক অনেকটাই কমাতে রাজি হয়েছে”।
ট্রাম্প ঠিক এমন সন্ধিক্ষণে এই মন্তব্য করেছেন যখন, নয়াদিল্লি আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় শুল্ক ও অ-শুল্ক তথা ট্রেড বেরিয়ার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র মার্কিন সফরের সময়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে যৌথ ঘোষণা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মার্কিন সফরে রয়েছেন। দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ বজায় রেখে বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে।
জয়সওয়াল আরও জানিয়েছেন, “এই বিটিএ-র মাধ্যমে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে শক্তিশালী ও গভীরতর করাই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য। এতে পণ্য ও পরিষেবা খাতে বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও সংহত করা হবে।”
এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প আবারও ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও কানাডা-র বিরুদ্ধে মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, "অন্যান্য দেশ বছরের পর বছর আমাদের বিরুদ্ধে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে। এবার আমাদের পালা।”
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে দুই দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হন। পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
ভারতের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বুরবোঁ হুইস্কি, ওয়াইন এবং ইলেকট্রিক ভেহিকল (EV)-এর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অনেকের মতে ট্রাম্পকে খুশি করার একটি কৌশল। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন চায় ভারত আরও বেশি পরিমাণে মার্কিন তেল, গ্যাস ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি করুক, যাতে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়।
২০২৩ সালে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার, যা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এবার শুল্ক কমানোর ফলে ঘরোয়া বাজারে তার অভিঘাত কী পড়তে পারে তা নিয়েও উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক চাপেও পড়তে হতে পারে নয়াদিল্লিকে।