ট্রাম্প ও রুচির শর্মা।
শেষ আপডেট: 18 April 2025 07:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি (tariff policy) নিয়ে ঝড় উঠেছে বিশ্ববাণিজ্যে। আলোচনার কেন্দ্রে বারবার উঠে আসছে এই নয়া নীতি। অনেকের কাছেই এটি রীতিমতো হুমকি হলেও, ভারত এই পরিস্থিতিকে একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট বিনিয়োগ বিশ্লেষক ও লেখক রুচির শর্মা।
সম্প্রতি রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রুচির বলেন, 'বিদেশি বিনিয়োগ ভারতে অনেকটাই কমে গিয়েছিল, কিন্তু এখন ফের তা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ট্রাম্পের ট্যারিফ বাড়ানোর পরিকল্পনা বিশ্ব পুঁজির গতিপথ পাল্টে দিচ্ছে, যেখানে উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যে ভারত একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।'
অর্থনীতিবিদদের মতে, মার্কিন ট্যারিফ রেট প্রতি ১% বাড়লে জিডিপি বৃদ্ধির হার ০.১% কমে যায়। ট্রাম্প এবার ট্যারিফ রেট ১০% করার পরিকল্পনা করছেন। এতে মার্কিন অর্থনীতি ১% পর্যন্ত ধাক্কা খেতে পারে বলে সতর্ক করেন রুচির।
তিনি বলেন, 'এই ধাক্কা আমেরিকাকে দুর্বল করলেও ভারতের মতো দেশকে লাভবান করতে পারে। দুর্বল ডলার সাধারণত উদীয়মান অর্থনীতির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে।'
রুচির শর্মা মনে করেন, এই নতুন পটভূমিতে ভারতে বিদেশি পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট এবং ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট—দুইই বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, 'ভারতীয় স্টক মার্কেট দামের দিক থেকে উঁচু হলেও, বৈচিত্র্যে খুবই শক্তিশালী। এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজার মূলধন বিশিষ্ট ৫০০-র বেশি কোম্পানি ভারতের মতো অন্য কোনও উদীয়মান অর্থনীতিতে নেই।'
এছাড়াও, মার্কিন বাজারের ওঠানামা থেকে ভারতীয় বাজার ক্রমে স্বাধীন হয়ে উঠছে বলেও তিনি মনে করেন। এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
রুচির মনে করেন, 'আমরা আবার খোলামেলা বাণিজ্যের দিকে ফিরছি, যেটা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমেরিকার মতো অন্তর্মুখী নীতিতে চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।'
তবে তিনি শুধুই আমেরিকা বনাম চিন বা আমেরিকা বনাম ভারতের প্রেক্ষাপটে না ভেবে, ভারতকে এশিয়ার বৃহত্তর বাণিজ্য নেটওয়ার্কে নিজেদের অবস্থান নতুন করে ভাবার পরামর্শও দেন।
তিনি জানান, বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ১০টি ট্রেড রুটের মধ্যে মাত্র একটি ভারত জড়িত। তার মধ্যে ৫টি চিনের অন্তর্ভুক্ত, অথচ এগুলিতে আমেরিকার কোনও যোগ নেই। তাই চিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্তরে কৌশলগত যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য আনতে হবে।
রুচির বলেন, 'ট্রাম্পের এই নীতি যতই বিশৃঙ্খল এবং আচমকা বলে মনে হোক, এর পিছনে একটা কৌশল আছে। আমেরিকার সাধারণ মানুষ মনে করেন, অর্থনীতি তাঁদের প্রতিকূলে চলছে। ট্রাম্প সেই মনোভাবকে কাজে লাগাচ্ছেন।'
ট্যারিফ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রথমে অনেক বড় হুঁশিয়ারি দেন, যেমন ৩০% শুল্ক বাড়বে। পরে তা কমিয়ে ১০%-এ নামান এবং তাতেও তিনিই জয়ী হন তাঁর পরিকল্পনায়। তাঁর প্রথম দফায় ট্যারিফ কেবল ১%-এর কাছাকাছি থেকে ২.৫%-এ পৌঁছেছিল, এবার শুরু থেকেই লক্ষ্য ১০%, যা আগের তুলনায় অনেক বড় পদক্ষেপ।
তবে রুচিরের মতে, প্রকৃত বিপদ হতে পারে, যদি চিন প্রতিক্রিয়া দেখায়। ট্রাম্পের ঘোষণায় বাজার যতটা আতঙ্কিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছিল চিনের প্রতিক্রিয়ায়। তাই চিন যদি বলে ‘আমরা আলোচনায় আসবো না, প্রতিশোধ নেব’—তখনই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে সব দেশের জন্যই।
রুচির বলেন, 'ট্রাম্প আমেরিকাকে কতটা অগ্রণী করতে পারবে তা এখনও সময় বলবে, কিন্তু তাঁর কর্মপন্থা বিশ্বের অন্য নেতাদের ভাবতে এবং জোর করে ‘কিছু করতে’ বাধ্য করছে। জার্মানির আর্থিক সংস্কারই এর উদাহরণ। শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেই এটি বাস্তবায়িত হয়েছে।'
বিশ্বব্যাপী পুঁজি, বাণিজ্য ও বাজার গতিবিধির এই নতুন বাস্তবতায় ভারত শুধু সুযোগ নেবে না, নেতৃত্বও দিতে পারে, এমনটাই মনে করেন রুচির শর্মা। তিনি বলেন, 'ভারতের এখন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় নয়, বরং দিশা দেখানোর সময়।'