ট্রাম্প (Donald Trump) সৌদি আরবকে 'পৃথিবীর কেন্দ্র' বলে উল্লেখ করেন কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে একটিও কথা বলেননি এই সফরে।
ট্রাম্প ও সৌদির যুবরাজ (সংগৃহীত ছবি)
শেষ আপডেট: 14 May 2025 17:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'আপনি রাতে ঘুমান? কিন্তু কীভাবে,' সৌদির যুবরাজকে (Saudi Crown Prince) এমনই প্রশ্ন করে বসলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে পা রাখার পর এই প্রথম বিদেশ সফরে গেছেন তিনি। যোগ দিয়েছেন সৌদি আরবে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড বিসনে এলিট-এ। সেখানেই এমন প্রশ্ন করে যুবরাজকে খানিকটা অপ্রস্তুতে ফেলেন তিনি। যদিও হেসে বিষয়টা সামলে নেন মহম্মদ বিন সলমন।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ওয়ার্ল্ড বিসনেস সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানটি হয়। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৌদি আরবের বিরাট প্রশংসা করেন ট্রাম্প। সৌদি আরব যেভাবে বদলেছে এবং দিন দিন উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তৈরি করছে, তা ভাবিয়েছে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও। সেই প্রসঙ্গেই তিনি যুবরাজকে ঘুমানোর বিষয়ে প্রশ্ন করে বসেন।
ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, 'মহম্মদ, আপনি রাতে ঘুমান কীভাবে? কী দারুণ কাজ করছেন। আমাদের মতোই সারারাত গড়াগড়ি দেন? ভাবেন, কীভাবে আরও ভাল করা যায়? যারা এসব ভাবেন না, তাঁরা কখনও সামনে এগোতে পারেন না।'
ট্রাম্পের এই মজার কথা শুনে মঞ্চে থাকা যুবরাজ হেসে ফেলেন, আর গোটা হলে সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, 'অনেকেই ভাবত সৌদি আরব এতদূর এগোতে পারবে না। কিন্তু গত আট বছরে আপনি যা করেছেন, তাতে সবাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি, হয়তো একটু বেশিই পছন্দ করি।'
আর তাই তো ক্রাউন প্রিন্সের জন্য বিরাট বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সৌদি আরব ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের অনুরোধে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন তিনি। এই সফরেই সেকথা ঘোষণা করেন। এরপর মজা করে বলেন, 'ক্রাউন প্রিন্সের জন্য আমি কত কিছুই না করি!'
বক্তৃতায় ট্রাম্প সৌদি আরবকে 'পৃথিবীর কেন্দ্র' বলে উল্লেখ করেন কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে একটিও কথা বলেননি। বিশেষ করে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়েছিল— সেনিয়েও মুখ খোলেননি তিনি। যদিও যুবরাজ বরাবরই বলে এসেছেন এই হত্যাকাণ্ডে তিনি কোনওভাবেই জড়িত ছিলেন না। মহিলাদের অধিকার-সহ অনেক সংস্কারের কথা বললেও, অনেকে মনে করেন ওই দেশে এখনও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা বিরোধীদের প্রতি সহনশীলতা তেমন নেই।
এই সফরে ট্রাম্প মূলত সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন। তিনি জানান, ১৪২ বিলিয়ন ডলারের একটি বড়সড় প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে এবং ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা চলছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিকাঠামো আর জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগ করবে।
তবে ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই খুশি নন। মার্কিন রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার সংস্থা আর বিদেশনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প অর্থনৈতিক লাভের জন্য মানবাধিকার নিয়ে মুখ বন্ধ করে আছেন।
ট্রাম্পের এই অবস্থান সদ্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের থেকে একেবারেই আলাদা। ২০১৯ সালে বাইডেন বলেছিলেন, সৌদি আরবকে তিনি 'একঘরে' করে দেবেন খাশোগি হত্যাকাণ্ড আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য। কিন্তু পরে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বেড়ে গেলে আমেরিকার জন্য সৌদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন বাইডেন সিদ্ধান্ত নেন সম্পর্ক আবার ঠিক করা দরকার।
সেই মতো ২০২২ সালে বাইডেন সৌদি সফরে যান এবং যুবরাজের সঙ্গে ফিস্ট বাম্প করে দেখা করেন। এটা নিয়েও সেসময় একাধিক প্রশ্ন ওঠে। অনেকে বলেছিলেন, এমন একজনের সঙ্গে এত বন্ধুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে দেখা করা ঠিক নয়। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, এটা কোভিড থেকে বাঁচার জন্য অভ্যর্থনা ছিল মাত্র।