শেষ আপডেট: 7th January 2025 17:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিব্বতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০০ পেরলো। আহতের সংখ্যা শতাধিক। কয়েকশো ঘরবাড়ি ভেঙেচুরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছেন এখনও বহু মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরও বেশি। মৃত ও জখমদের খুঁজতে ও উদ্ধারে চিনা সেনাবাহিনী দুর্গত এলাকায় ড্রোন ও বিমানবাহিনীকে নামিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরেই পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী অনুসন্ধানী ড্রোন পাঠানো হয়েছে।
হিমালয় পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের ভূমিকম্প খুবই স্বাভাবিক। যার ভূবৈজ্ঞানিক কারণ হচ্ছে ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান টেকনোটিক প্লেটের সংঘর্ষ বা ঘর্ষণ। এর মধ্যে নেপাল হল বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার শীর্ষে। প্রতিবছর ভারতীয় টেকনোটিক প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটকে গড়ে ৫ সেমি করে ঠেলা মারে উত্তর মুখে। নেপালের ভূবিজ্ঞানই হল নতুন, অস্থায়ী পাথুরে জমির। সেখানে বিভিন্ন শহরগুলিতে অধিক জনসংখ্যার চাপ এবং কাঠমান্ডুর মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে অবৈজ্ঞানিকভাবে গড়ে তোলা হোটেল-জনবসতির মাশুল গুনতে হচ্ছে হিমালয় পাদদেশের অঞ্চলকে।
সহজ কথায় বলতে গেলে, সমুদ্রমন্থনের সময় যেমন সমুদ্রের তলদেশ থেকে এক-এক করে নানান বস্তু উঠেছিল, তেমনই মাটির নীচে অবস্থান করা পরতে পরতে সাজানা বিভিন্ন স্তরের পারস্পরিক ঘর্ষণে ভূমিকম্প হয়েছে। অর্থাৎ বিরাটাকার বাসুকী যদি ভূগর্ভে ঘুমিয়ে থাকার পর হঠাৎ জেগে উঠত, তাহলে যেভাবে উপরিভাগের মাটি কেঁপে উঠত এদিন তাই ঘটেছে। কম্পনের ফলে পার্বত্য হিমালয়ের পৃষ্ঠদেশেও বদল ঘটেছে বলে বৈজ্ঞানিকদের অনুমান।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর বলছে, স্বশাসিত তিব্বতের ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় দ্বিতীয় স্তরের বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ চলছে। প্রায় ১৫০০ জন উদ্ধারকারী লাগাতার কাজ করছেন। এই বিপর্যয় ইয়ারলুং জাংবো নদীতে চিনের বিশাল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাকেও চোখ রাঙিয়ে দিয়েছে। তিব্বতের টিংরি এলাকার এই ভূকম্পটি হয় লাসা ব্লকের উত্তর-দক্ষিণে সংকোচন এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে ঠেলার মারার ফলে। উল্লেখ্য, তিব্বতের এই জায়গাটি তিব্বতি বৌদ্ধদের কাছে অন্যতম ধর্মীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। কারণ এখানেই থাকেন তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামা। জায়গাটি মাউন্ট এভারেস্ট থেকে মাত্র ৮০ কিমি দূরে।
চিনা লালফৌজের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের তরফে ভূমিকম্পের খবর পাওয়া মাত্রই বিমানবাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই দুর্গতদের উদ্ধারে পরিবহণ, চিকিৎসা, হেলিকপ্টার এবং সেনাবাহিনীকে তৈরি রাখা হয়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা গিয়েছে, এদিন ভারতীয় সময় বেলা ১১টা ২৭ মিনিট নাগাদ ফের একটি আফটারশকে কেঁপে ওঠে শিজাং (তিব্বত) স্বশাসিত এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৪.৫। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সকলকে সর্বাত্মক শক্তিতে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হিমালয়ের উত্তর পাদদেশ এলাকার নেপাল-তিব্বতের সীমান্ত এলাকায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল। তীব্র ভূকম্পনে কেঁপে উঠেছে তিব্বত, নেপাল, ভুটান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এমনকী দক্ষিণ ভারতেরও কোনও কোনও এলাকায়। এভারেস্ট অঞ্চলের উত্তরভাগের গেটওয়ে বলে খ্যাত টিংরি নামে একটি গ্রামীণ তালুকে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল। চিনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, মাটি থেকে ১০ কিমি নীচে ভূমিকম্পের উৎস ছিল।