শেষ আপডেট: 10th March 2025 16:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সময় যত গড়াচ্ছে আরও অশান্ত হয়ে উঠছে সিরিয়ার (Syria) পরিস্থিতি। ভয়াবহ সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগামী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এবার ভয়াবহ সেই পরিস্থিতির কথা জানালেন রাজধানী শহর দামাস্কাস (Damascus) থেকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিরিয়ার লাতাকিয়ার বাসিন্দা আলি কোশমার (Ali Koshmr)।
৩৬ বছর বয়সি যুবক জানিয়েছেন, একের পর এক গুলি ও একাধিক সশস্ত্র লোকের চিৎকারে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। অভিযোগ, সিরিয়ার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু আলাউইতদের চিৎকার করে বাড়ির বাইরে ডাকে তারা। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ রয়েছেন আলাউইতরা। মূলত লাতাকিয়া এবং তারতুস অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা।
আলির অভিযোগ, সশস্ত্র বাহিনী গ্রামে ঢুকে তাঁদের বাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে এবং অস্ত্র দিয়ে নির্মম অত্যাচার শুরু করে এবং পরে এলোপাথাড়ি গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। যুবকের আরও অভিযোগ, তাঁর ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছে আল আসাদের সশস্ত্র অনুগামীরা। এখন সে কেমন আছে তাও জানা যায়নি।
আসাদের শাসনকালে আলাওয়াইট সম্প্রদায় সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য উচ্চপদে বিশেষ সুবিধা ভোগ করত। তবে তিন মাস আগে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সম্প্রদায়ের উপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটছে। সহিংসতার পাশাপাশি লাতাকিয়া শহরের আলাউইত অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ ও খাবার জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। আসাদ জমানার পতনের পর আলাউইত সম্প্রদায়কে আক্রমণ করা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় ঢুকে গণহত্যা, বাড়িতে আক্রমণ এবং জোর করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা-সহ রীতিমতো তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তারা।
কোশমার জানিয়েছেন, তাঁর মাথায়, পিঠে এবং পেটে ছুরি বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রবিবার রাত পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হলেও শেষমেশ আমাকে কোনওরকমে একটি গাড়ি জোগাড় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন।
এরপরই চরম অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে যুবক মনে করিয়ে দেন, এখানে কোনও নিরাপত্তা নেই। যে কোনও সময় নিজেরা বেঁচে থাকবেন কী না সে বিষয়ে নিজেদের কাছেই কোনও উত্তর নেই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমাদের পরিচয় কী আমাদের এমন অবস্থার জন্য দায়ী নয়?
গত বছর আসাদের সাম্রাজ্য পতনের পর থেকেই দফায় দফায় আলাউইত এবং সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। লাতাকিয়া, বানিয়াস-সহ একাধিক গ্রামাঞ্চলে গণহত্যা থেকে শুরু করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও জোরকরে বাস্তুছাড়া করা-সহ একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে আসছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে একাধিক ভিডিও সামনে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে পুরো পরিবারকে খুন করা হয়েছে। এছাড়া একজন সিরিয়ান যোদ্ধাকে রক্তাক্ত মৃতদেহের উপরে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে। পাশপাশি জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
লাগাতার হিংসার পিছনে রাশিয়ার ষড়যন্ত্রকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ভারত সরকারের তরফে আর্থিক অনুদান চেয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন আলাউইত সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিকে হিংসার ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে শুরু হয়েছে তদন্ত।