সেদনায়া কারাগার থেকে বন্দি মুক্তি।
শেষ আপডেট: 8th December 2024 17:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস দখল করে নিয়েছে রাজধানী দামাস্কাস। এর পরেই সেদেশের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই কারাগারেই হাজার হাজার বিরোধী সমর্থকের উপর নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে ইতিহাসে লেখা আছে।
বাশার শাসনের পতনের পরেই বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ঘোষণা করেছে, বন্দিদের মুক্ত করা হয়েছে এবং এটিকে ‘অন্যায় যুগের সমাপ্তি’ বলেও উল্লেখ করেছে তারা। এই কারাগারকে এক সময় ‘মানুষের কসাইখানা’ বলে বর্ণনা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বহু মানুষ কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে। এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি দ্য ওয়াল।
সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নামগুলোর একটি হল সেদনায়া কারাগার। দামাস্কাসের কাছে এই জেলে বন্দি ছিলেন সরকার বিরোধী হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দি। এই কারাগারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এমন ভয়াবহ কাহিনি, যে এর নামই হয়ে গেছে, 'মানুষের কসাইখানা।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর, সরকার বিরোধী প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে চালানো নিপীড়নের এক বড় কেন্দ্র হয়ে ওঠে সেদনায়া। Amnesty International এবং Syrian Observatory for Human Rights-এর রিপোর্ট অনুসারে, এই কারাগারে ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কেবল ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই কারাগারে ৫,০০০ থেকে ১৩,০০০ এরও বেশি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।
One of the detainees freed from Assad’s human slaughterhouse in Sednaya has lost his memory and is unable to speak, shattered by the horrors he endured, Rebels try to ask him about any details to take him back to his family but he’s unable to speak.#Syria #Sednaya pic.twitter.com/PgDVWJFl7w
— Hussam Hammoud | حسام (@HussamHamoud) December 8, 2024
সেদনায়ায় আটক বন্দিদের উপর চলত ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। যারা 'রেড বিল্ডিং' নামক এক জায়গায় আটক ছিল, তাদের প্রায়ই নিপীড়নের শিকার হতে হতো। তাদের উপর চালানো হতো মর্মান্তিক মারধর, যৌন নিপীড়ন, এবং শারীরিক অত্যাচারের এক ভয়াবহ সিরিজ। তারা কখনও জানত না, কখন তাদের জীবন শেষ হবে বা তাদের কীভাবে হত্যা করা হবে। এই হত্যা প্রক্রিয়া গোপনভাবে সম্পন্ন করা হতো, এবং বন্দীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য কোনও সুষ্ঠু বিচার হতো না।
জানা যায়, বন্দিদের বলা হতো, যে তাদের অন্য কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে, কিন্তু এর পরই তাদেরকে আন্ধকারে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। এক সপ্তাহে এক বা দুটি করে এই ধরনের গণহত্যা সম্পন্ন হতো, যেখানে ২০ থেকে ৫০ জন বন্দিকে একসঙ্গে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হতো। এরপর তাদের দেহগুলি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধিত করা হতো এবং গণকবর দেওয়া হতো।
বন্দিদের উপর শারীরিক অত্যাচার ছাড়াও চলত মানসিক অত্যাচার। খাবার, জল, এবং চিকিৎসার অভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ত। অনেকেই দীর্ঘদিন পর মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল।
এই সব অত্যাচারের পিছনে ছিল সিরিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুমোদন। এমনকি, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের দিয়ে স্বাক্ষরিত হতো এসব বন্দিদের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত।
২০১৫ সালের পর সেদনায়া কারাগারের গণহত্যার প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও থেমেছে, তবে ২০১৫-এর পরেও বন্দিদের এখানে পাঠানো হচ্ছিল এবং অত্যাচার বন্ধ হয়নি বলে মনে করা হয়।
সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন দেশটি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে, সেদনায়ার সেই শোকাবহ ইতিহাস নতুন করে উন্মোচিত হচ্ছে। অনেক বন্দি মুক্তি পেয়েছেন, এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন জীবনও শুরু করছেন। তবে সেদনায়ার শিকার হওয়া অনেকেই আজও জীবিত আছেন। তাঁদের মুখে শোনা সেই বিভীষিকার গল্পগুলো এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে।