আসাদ শাসনের পতন।
শেষ আপডেট: 9th December 2024 12:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিরিয়ায় বাশার-শাসনের পতনের পরে বিদ্রোহী জনগোষ্ঠী এইচটিএস-এর গত কয়েকদিনের তীব্র আক্রমণ ও অশান্তির ছবি (Syria Clash) বারবারই সামনে আসছে মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু আজ নয়, বিদ্রোহীরা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বাশার আল-আসাদের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বারবারই আসাদ পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যর্থ হয় তারা। কিন্তু শেষ ১৩ দিনের মধ্যে তারা এমনই তীব্র আক্রমণ পরিচালনা করে, যা পাঁচ দশকের শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়। আসাদ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
অনেকেই বলছেন, বিদ্রোহীদের এই অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের সুপরিকল্পনা। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তির গোপন সমর্থনও এই বিদ্রোহকে ১৩ দিনে সফল করেছে, যা ১৩ বছর ধরে সম্ভব হয়নি।
বাশার আল-আসাদের শাসন ব্যবস্থার মূলে আঘাত হানার ইতিহাস দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রচিত হলেও, এই শেষ সময়টি ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে আসাদকে সহায়তা করে আসছিল। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতে রাশিয়া ব্যস্ত থাকায়, আসাদের শাসনগড় ছিল প্রায় অরক্ষিত।
অন্যদিকে, আসাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল হিজবুল্লাও। মাস দুয়েক আগে তাদের নেতা হাসান নাসরাল্লার মৃত্যুর পর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েন আসাদও, বিদ্রোহীদের দমনে তাঁর কার্যক্ষমতা খানিক কমে যায়।
এর পাশাপাশি সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং সম্পদের অপব্যবহারের ফলে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী কার্যত অচল হয়ে যায়। ট্যাঙ্ক ও বিমানের জ্বালানি সংকট এবং সেনাবাহিনীর মনোবলের অভাব—এসব কারণে বিদ্রোহীরা সমর্থন পেতে শুরু করে। এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়েই বিদ্রোহীরা তাদের চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করে।
আক্রমণের সময় তুরস্ক বিদ্রোহীদের প্রতি প্রকাশ্যে কোনও সমর্থন জানায়নি। তবে কিছু সূত্র থেকে জানা যায়, এইচটিএস ছ’মাস আগেই তাদের পরিকল্পনা তুরস্ককে জানায় এবং তুরস্ক গোপনে এই অভিযানের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
এমনিতে যদিও এইচটিএস আলকায়দার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সংগঠন, যাকে তুরস্ক নিজের দেশে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করেছে বহু বছর আগে। কিন্তু সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার পরে, তারা কোনও হস্তক্ষেপ তো করেইনি, উল্টে কূটনৈতিকভাবে গোপন সমর্থন জানিয়েছিল।
এর কারণও আছে। তুরস্কের জন্য সিরিয়ার শরণার্থী সমস্যা একটি গুরুতর অভ্যন্তরীণ ইস্যু। বাশার আল-আসাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হওয়ায়, বিদ্রোহীদের প্রতি নীরব সমর্থন দিয়ে আদতে তাদের শরণার্থী সমস্যারই সমাধান করতে চেয়েছিল তুরস্ক।
তবে আশঙ্কার মেঘ আকাশে রয়েই গেছে। সিরিয়ার এই শাসন পরিবর্তন নতুন সংঘাত তৈরি করতে পারে দেশে। সে ক্ষেত্রে নতুন শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তুরস্ক।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়াতে আছড়ে পড়ে। সিরিয়ার জনগণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি তোলে। কিন্তু বাশার সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে এই আন্দোলন রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে।
বাশার আল-আসাদ রাশিয়া ও ইরানের সামরিক সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকেন। রাশিয়ার বিমান হামলা ও ইরানের সামরিক বাহিনী তার শাসনকে রক্ষা করে। তবে, সিরিয়ার জনগণের জন্য এই যুদ্ধ ছিল এক দীর্ঘ দুর্দশার সময়।
এবছরেই বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে। অবশেষে, তারা রাজধানী দামাস্কাসে প্রবেশ করে ডিসেম্বরের গোড়ায়। বিদ্রোহীদের এই অভিযান আসাদ সরকারের পতন ঘটায় ৮ ডিসেম্বর।
বিদ্রোহী নেতারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, এইচটিএস-এর অতীতের চরমপন্থী কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কি শান্তিপূর্ণ হবে নাকি নতুন শাসকগোষ্ঠী নতুন শোষণের জন্ম দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।