শেষ আপডেট: 26th July 2024 19:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তৃতীয়বারের জন্য মহাকাশ অভিযানে গেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। গত ৫ জুন নাসার তরফে আমেরিকার ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস স্টেশন থেকে মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপস্যুলে চড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের একটি ভিডিওয় দেখা যায়, আনন্দে হাততালি দিতে দিতে নেচে নেচে স্পেস স্টেশনে ঢুকছেন তিনি।
তার পর থেকে ৫০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও স্পেস স্টেশনে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস! সঙ্গী তাঁর সহ-অভিযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর। মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু কবে পৃথিবীতে ফিরবেন তাঁরা, তা এখনও অনিশ্চিত। তাই খানিকটা উদ্বেগেই রয়েছে মহাকাশচারী মহল। যদিও নাসার তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিরাপদেই আছেন সুনীতারা।
তবে উদ্বেগের কারণ যথেষ্টই আছে। কারণ ওই স্টারলাইনার ক্যাপস্যুল সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত স্পেস স্টেশনে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে নাসা। তার পরে শেষ হয়ে যাবে ব্যাটারি। ইতিমধ্যেই সেখানে সুনীতাদের ৫০ দিন হয়ে গিয়েছে। ফলে হাতে রয়েছে মাত্র ৪০ দিন।
প্রসঙ্গত, এটিই ছিল বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা। তাছাড়া, সাধারণ মানুষ যাতে বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশে বেড়াতে যেতে পারে, সেই পরিকল্পনারও প্রথম ধাপ এই বোয়িং। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পৃথিবী ছাড়ার পরেই এই বোয়িংয়ের পাঁচটি হিলিয়াম ফুটো হয়ে যায়। এর ফলে নষ্ট হয়ে যায় পাঁচটি ম্যানুভারিং থ্রাস্টার। তবে স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। তখনই কেন মহাকাশযানটিকে ত্রুটিমুক্ত করা হয়নি, কেন স্থগিত করা হয়নি এই উড়ান, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
নাসা এতদিনে জানিয়েছে, বোয়িং স্টারলাইনার ঠিক কী কারণে বিগড়ে গিয়েছে, তার খানিকটা তারা বুঝতে পেরেছেন। তবে ওই বোয়িং স্টাইলাইনার মহাকাশযানে সুনীতাদের ফেরা সম্ভব হবে কিনা, হলেও সেটা আর কতদিনে, তা নিয়ে এখনও কিছুই বলতে পারেনি নাসা। বরং তারা এখনও বেশ ইতিবাচক ভাবেই দেখছে বিষয়টি।
শুক্রবার নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ জানিয়েছেন, সুনীতা এবং বুচ ‘ভাল মেজাজ’-এই রয়েছেন। তাঁরা আগেও সুদীর্ঘ অভিযানে সামিল হয়েছেন। তাছাড়াও, ‘আকস্মিক’ কিছু ঘটলে কী করতে হবে, সেই নিয়ে 'প্ল্যান বি' রয়েছে নাসার। সেক্ষেত্রে স্পেসএক্সের ক্রিউ ড্রাগন বা রাশিয়ার সয়ুজ় মহাকাশযানে ফিরতে হবে সুনীতাদের। তবে সেই ব্যাকআপ পরিকল্পনা প্রয়োগ করার আগে ওই স্টারলাইনার বোয়িংয়েই যাতে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টাই চলছে।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, নাসা এবং বোয়িং দুই সংস্থাই এই গ্যাস লিকের বিষয়টি আগেই আন্দাজ করেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশেষ পাত্তা না দিয়েই সুনীতাদের স্পেস স্টেশনে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, সুনীতা ও বুচের এই স্টারলাইনার রকেটের নকশা তৈরির পিছনে নাসারও হাত রয়েছে। তাই তাঁরা কেন এই গ্যাস লিকের বিষয়টি নিয়ে সচেতন হল না, সেই নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
স্টারলাইনারের কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার জানিয়েছেন, এই মিশন আগে ছিল সর্বাধিক ৪৫ দিনের, তা থেকে একে ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যদিও এই সময়ের মধ্যেই সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, এমনটাও ভাবছেন না তাঁরা। এই সময়কাল ধরে একাধিক তথ্য যাচাই করবে নাসা। তারপরই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নাসার এক আধিকারিকের কথায়, দুই মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনও তাড়াহুড়ো করা হবে না। ইতিমধ্যেই একাধিকবার সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরার তারিখ বদল করা হয়েছে।
এর আগে, ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস। একসময় সর্বোচ্চ স্পেসওয়াকের রেকর্ডও তাঁর দখলে ছিল। সুনীতাদের এই মিশন অবশ্য অনেক আগেই হত। কিন্তু প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে তা পিছিয়ে যায় একাধিকবার। এখন মহাকাশে পৌঁছনোর পর বিরাট সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁরা।