শেষ আপডেট: 13th March 2025 11:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির অনুরোধ-উপরোধে শেষমেশ ঢেঁকি গিলতে চলেছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী দুনিয়া ও সহযোগী ন্যাটো। যুদ্ধের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর রাশিয়া যখন ধারে ও ভারে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে, তখন শান্তিচুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এবং প্রতিবারের মতো এবারেও শান্তিচুক্তির গোলটেবিল বৈঠকে মধ্যস্থ ভূমিকা নিয়েছে বিশ্বদাদা আমেরিকা। কিন্তু, এই মুহূর্তে লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে, এই যুদ্ধবিরতির শান্তিচুক্তিতে রাশিয়া কী কী শর্ত আরোপ করতে চলেছে। রুশ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র বন্দি প্রত্যর্পণ ছাড়াও ক্রেমলিন কর্তৃপক্ষ অতীতের শর্তগুলিতে অনড় থাকলে চুক্তির ভবিষ্যৎ আঁধারেই ডুবে যেতে পারে।
রাশিয়াকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিরাট হুমকি দিয়েছেন। রাশিয়া যুদ্ধ না থামালে তাদের উপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও তাতে রুশ সরকারে বিশেষ হেলদোল পড়েছে বলে এখনও টের পাওয়া যায়নি। কারণ, আমেরিকা-ইউক্রেনের পক্ষে পশ্চিমী দুনিয়া ও ন্যাটো সহযোগী দেশগুলি থাকলেও রাশিয়ার দিকে রয়েছে আরেক মহাশক্তিধর চিন।
দিন দুয়েক আগেই রাশিয়া, চিন ও ইরান ওমান উপসাগরীয় এলাকায় তিন বাহিনীর যৌথ মহড়া চালানোয় আমেরিকার মাথার চুল খাড়া হয়ে গিয়েছে। কারণ, রাশিয়া, চিন ও ইরান- এই তিন দেশই পরমাণু শক্তিধর এবং যুদ্ধকৌশলে ন্যাটো কিংবা আমেরিকার থেকে কোনও অংশেই কম নয়। তাছাড়া, যে অঞ্চলে এই যৌথ মহড়াটি হয়েছে, আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেই জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ধারণা, পরোক্ষে আমেরিকাকেই সমঝে দিতে বার্ষিক এই যৌথ মহড়াটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির মহড়া হিসেবে আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র ডিরেক্টর জন ব়্যাটক্লিফ এবং রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআরের প্রধান সের্গেই ন্যারিশকিন প্রায় ২ বছর পর প্রথম ফোনে কথা বলেন মঙ্গলবার। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, তাঁরা নিয়মিত তথ্য ও মত বিনিময়ে সম্মত হয়েছেন। বিশেষত আন্তর্জাতিক স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় দুদেশ সমঝোতার ভিত্তিতে চলবে বলে সহমত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই আলোচনার মধ্যেই শান্তিচুক্তির শর্ত নিয়েও সম্ভবত কথা বলেছে রাশিয়া। কেননা, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাশিয়া বেশকিছু শর্ত আদায় করে ছাড়বে। তা না হলে, তিন বছরের এই যুদ্ধের নিটফল হয়ে যাবে শূন্য।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়েই ক্রেমলিন জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তারা ভেবে দেখছে। অবশ্য মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও আশা প্রকাশ করে বলেন, আর কয়েকদিনের মধ্যেই চুক্তিতে সই হয়ে যাবে। অবশ্য রাশিয়ার তরফে এরকম কোনও প্রতিশ্রুতি এখনও মেলেনি। চুক্তির আগেই রাশিয়া একগুচ্ছ শর্তাবলি তৈরি করেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও রাশিয়া আগের শর্তগুলি দিয়েই কিয়েভকে চাপে রাখতে আলোচনার টেবিলে শর্ত ফেলতে পারে। যেমন- ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলি থেকে বের করতে হবে। ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের চারটি প্রদেশের উপর রাশিয়ার দাবিকে স্বীকৃতি এবং ইউক্রেনের মাটিতে কোনও বিদেশি শক্তির ঘাঁটি থাকতে পারবে না। উল্লেখ্য, এই শর্তগুলিই শান্তি টেবিলে যদি আসে, তাহলে আমেরিকার আর্থিক অবরোধের হুমকি সত্ত্বেও পুতিনকে বাঁকানো যাবে না কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এখানেও রাশিয়ার অলক্ষ্য বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারে আমেরিকার শত্রু চিন ও ইরান।