শেষ আপডেট: 3rd July 2024 17:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বয়সের কাঁটা থমকে রাখতে কে না চায়! সুকুমার রায়ের হযবরল-তে সেই আইকনিক চরিত্র 'বুড়ো' কবেই বলেছিল, 'চল্লিশ বছর হলেই আমরা বয়েস ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না-- উনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে বয়েস নামতে থাকে।' তার পরে দেখা যায়, গুপি-বাঘাও জোয়ান হতে চেয়েছিল। জোয়ান হওয়ার অমোঘ নেশায় পা দিয়েছিল ভুল ফাঁদেও। 'আশিতে আসিও না' সিনেমায় আবার গ্রামের এক পুকুরে ডুব দিলেই ফিরে পাওয়া যাচ্ছিল যৌবন, তাই কাতারে কাতারে মানুষ ছুটে আসছিলেন একটি ডুব দিতে।
মোট কথা, যৌবনের প্রতি অমোঘ টান মানুষের চিরন্তন। একটা সময়ের পরে প্রায় প্রতিটি মানুষই বোধহয় অন্তত একবারের জন্য ভাবেনই, ইস... বয়সটা যদি থামিয়ে রাখা যেত!
তবে এসবই কল্পকাহিনি এবং আফশোসের সমাহার। বয়সের কাছে পার পায় না কেউই, অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে। কিন্তু বিজ্ঞানের পরিধি যে আদতেই অসীম, তা প্রমাণ করতে বিজ্ঞানই যেন বারবার বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করে।
ঠিক যেমন আমেরিকার কোটিপতি ব্যবসায়ী ব্রায়ান জনসন করেছেন। ৪৬ বছর বয়সে পৌঁছনোর পরে, নিজেকে তরুণ রাখার জন্য তাঁর প্রায় সমস্ত অর্থই বিনিয়োগ করেছেন নানাভাবে। বয়স কমাতে তিনি প্রতিদিন চূড়ান্ত ডায়েট মেপে খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার পাশাপাশি, ১০০-রও বেশি ওষুধ খান। ৩০ জন চিকিৎসকের একটি নিজস্ব দল রয়েছে তাঁর। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা আধুনিক ডিভাইস বসানো রয়েছে, যেগুলি প্রতিনিয়ত তাঁর শরীরের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে। যৌবন ফিরে পেতে নিজের ছেলের প্লাজমাও শরীরে নিয়েছেন ব্রায়ান। তাঁর স্বপ্ন, তাঁকে দেখতে লাগবে বছর ১৮-র যুবকের মতো।
সফলও হয়েছেন বলা যায়। ২০২৩ সাল থেকে এই পদ্ধতি শুরু করার পরে এই এক বছর পার করে তিনি অনেকটাই ফল পেয়েছেন। ছবি দেখলে স্পষ্ট ফুটে ওঠে তাঁর বেড়ে চলা তারুণ্য।
এহেন ব্রায়ান সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন তাঁর ঘুমের রুটিন। যা নিছক দৈনিক রুটিন নয়, যা তাঁর বয়স কমানোর এই পদ্ধতির এক অন্যতম অস্ত্রও বটে। ব্রায়ানের কথায়, ঘুম শরীরের এতই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, যেটা দিয়ে শরীরের অনেক ভাল-মন্দ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাঁর ভাষায়, 'স্লিপ প্রফেশনাল'দের মতো ঘুমোতে পারলে, 'পারফেক্ট স্লিপ স্কোর' অর্জন করা যাবে, যা শরীরকে তরতাজা করবে ভিতর থেকে।
একটি দশ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ব্রায়ান বলেছএন, 'ঘুম দিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না, আমি জানি। কিন্তু এই ঘুমই শরীরের এনার্জির অন্যতম উৎস, যা দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করা সহজ হয়।'
এবিষয়ে তাঁর প্রথম টিপস হল, প্রফেশনাল স্লিপারের মতো ঘুমোনো। দ্বিতীয়ত, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনো। যেমন তিনি নিজে রোজ রাত সাড়ে ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঘুমোন। এর পরে তিনি বলেছেন, ঘুমোনোর আগে ধড়ফড়িয়ে কাজ শেষ না করে, আগে থেকে শেষ করে, ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে তার পরে ঘুমোতে। তাঁর চার নম্বর পয়েন্ট হল, রাতের ঘুমের আগে খাবারের পরিমাণ যতটা সম্ভব কম করতে হবে। শেষতম বা পঞ্চম টিপস হল, অ্যালকোহল ও কফি এড়িয়ে চলতে হবে, তবেই নিরবচ্ছিন্ন ভাল ঘুম হবে। পাশাপাশি স্ক্রিনটাইম কমানো এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঘুমোনোর কথাও বলেছেন তিনি।
A reminder that your bedtime is your most important appointment today, and everyday. Respect yourself and be on time. pic.twitter.com/zmE8ymOl55
— Bryan Johnson /dd (@bryan_johnson) July 2, 2024
ব্রায়ানের এই ভিডিও ঝড়ের বেগে ভাইরাল হয়েছে। বয়স কমিয়ে ফেলা মানুষের পরামর্শ বলে কথা! এত ভাল থাকার পিছনে ঘুমের ভূমিকা কেমন, তা অনেকেই জানতে আগ্রহী। ভিডিও দেখার পরে আছড়ে পড়েছে কমেন্টও। তাতে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। কেউ তাঁর সঙ্গে সহমত হয়ে বলেছেন, 'মানুষের প্রতিদিনের সবচেয়ে জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট হল ঘুমের সঙ্গে। এই সময়টা কোনওভাবেই মিস করা উচিত নয়।' কেউ আবার মজা করে বলেছেন, 'রাত দুটোর সময়ে একবাটি খাবার খেতে খেতে তোমার ভিডিও দেখে ভাবছি, কত পরিবর্তনই না করতে হবে নিজেকে!' কেউ সরাসরি লিখেছেন, 'আপনার বলা কথাগুলোর মধ্যে ৯০%-ই অসম্ভব।' কারও সপাট মন্তব্য, 'আমরা তো আপনার মতো বয়স কমানোর মডেলিং করছি না! আমাদের অনেক সমস্যা নিয়ে বাঁচতে হয় বাস্তব জগতে।'