শেষ আপডেট: 13th March 2025 13:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বালুচ যোদ্ধাদের হাতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে চিনের। কারণ, ভারতের পক্ষে বিপদসঙ্কুল চিন-পাকিস্তান বাণিজ্য করিডর তৈরিতে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ঢেলে রেখেছে বেজিং। আর তা নিয়েই আপত্তি বালুচদের। খনিজ সম্পদে ঐশ্বর্যশালী বালুচিস্তানের মাটিতে অর্থ ফলে। কিন্তু, সেই অর্থ চলে যায় ইসলামাবাদের রাজকোষে। তার উপর গ্বদর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও দখল নিয়ে চিনের উপর প্রবল খাপ্পা বালুচরা। তাই একের পর এক চিনা ইঞ্জিনিয়ার, চিনা নির্মাণকর্মী, দেশীয় নির্মাণকর্মী ও নির্মাণ কাঠামোয় হামলা চালিয়েছিল বালুচ যোদ্ধারা। এবার ট্রেন ছিনতাইয়ের বড়সড় অপারেশনে চিন দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার সঙ্গে চিনের হাত ধরে অর্থনীতির মাজা খাড়া করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা পাকিস্তানেরও মুখ পুড়েছে।
বুধবার রাতের মধ্যে পাক বাহিনী অপহৃত জাফফর এক্সপ্রেসকে মুক্ত করতে পারলেও তার বিনিময়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী ও সেনাকর্মীর প্রাণের মাশুল গুনতে হয়েছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও নিবন্ধ লেখক ব্রহ্ম চেল্লানির মত, প্রতিবেশী দেশগুলির বিরুদ্ধে জঙ্গি লেলিয়ে দেওয়ার পাকিস্তানি ছকের বৃত্ত পূর্ণ হয়েছে। ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের ছাড়া মোরগগুলি দিনের শেষে বিশ্রাম নিতে বাসায় ফিরেছে।
পাকিস্তান সেই দেশ, যাদের দেশে রাষ্ট্রের মদতে এবং সেনার নিয়োগে প্রতিবেশী দেশে অশান্তি ছড়াতে জঙ্গিদের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেছেন, বালুচিস্তানের সমস্যা এত সহজে মিটবে না। যতদিন না পাকিস্তান বালুচিস্তানের মানবাধিকার রক্ষায় মন দেবে। ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন চালানো বন্ধ না করলে, অধিকার না দিলে ওরাও মানবে না। বালুচ লিবারেশন আর্মি যারা এই ট্রেনটি অপহরণ করে কবজায় রেখেছিল, তারা এখন মহিলা আত্মঘাতী বাহিনীও তৈরি করেছে। তাদের বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে এটাও বড় অভিযোগ যে, এই অঞ্চলের সমৃদ্ধশালী প্রাকৃতিক গ্যাস ভাণ্ডারকে লুটের বরাত হিসেবে চিনের হাতে তুলে দিতে চাইছে পাকিস্তান সরকার।
বালুচিস্তানকে শোষণ করার জন্য ইসলামাবাদ সরকারকে সাহায্য করছে চিন, গ্বদর সমুদ্র বন্দর সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ঢালছে শি জিনপিংয়ের কমিউনিস্ট সরকার। চিন-পাকিস্তান বাণিজ্য করিডরে ঢালা চিনের ৬৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বিরাট অংশ বালুচিস্তানে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বালুচিস্তানে রয়েছে বেশ কয়েকটি খনি, তার মধ্যে অন্যতম হল স্বর্ণখনি। যেমন রেকো ডিক। যার মালিক হল খনি-হাঙর বারিক গোল্ড। এই খনিকে বিশ্বের সবথেকে বড় সোনা ও তামার খনি বলে গণ্য করা হয়। বালুচিস্তানের আরেকটি সোনা-তামার খনি চালায় চিন।
সম্প্রতি বালুচ রাজি আজোই সাঙ্গার নামে স্বাধীন বালুচিস্তান গঠনের দাবিতে লড়াই করা সশস্ত্র আন্দোলনকারীদের জোট ঘোষণা করেছে, তারা তাদের সামরিক ও কূটনৈতিক কৌশল পুনর্গঠন করতে চলেছে। তারা একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড সিস্টেম গঠন করে চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অভিযান চালাবে। পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ তিলক দেবশরের মতে, বালুচ যোদ্ধাদের সম্মিলিত জোট গঠনের ঘোষণার প্রথম নির্দশন ছিল এই ট্রেন ছিনতাই। পাকিস্তানকে এবার থেকে এই ধরনের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাস তৈরি করে নিতে হবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক গোয়েন্দা অফিসারও বলেছেন, বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির এই হামলায় চিনে টনক নড়ে যাবে। পদে পদে পাকিস্তানের জঙ্গি দমনে ব্যর্থতায় অখুশি চিন। কারণ, এতে তাদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বিএলএ-র কাছে আনুমানিক ৫,০০০ লড়াকু বালুচ রয়েছে। যারা এককথায় প্রাণ দিতে তৈরি। ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র বালুচদের হাতে আসে। যা অত্যন্ত আধুনিক ও সংখ্যায় প্রচুর।
মার্কিন মানবাধিকার কর্মী ম্যালকম এক্স বলেন, শান্তি ও স্বাধীনতাকে পৃথক করা যায় না। কোনও মানুষ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত শান্তিতে বাস করতে পারে না। তাঁর মতে, ১৯৪৭ সাল থেকে এখানকার মানুষ পাকিস্তানের অধীনতা মুক্ত হয়ে স্বাধীন হতে চাইছে। আর তাকে কেন্দ্র করেই যত অশান্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বালুচিস্তানের দাবার ঘুঁটি কেবলমাত্র চিন ও পাকিস্তান নয়, আফগানিস্তানও। কাবুলের সিংহাসনে যে যখন রাজ করেছে, তখনই তারা সীমান্তবর্তী কম জনসংখ্যার, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বালুচিস্তানের দিকে কুনজর দিয়েছে।
তাই এই ত্রিফলার হাতমুক্ত হতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বালুচ যোদ্ধারা। ট্রেন ছিনতাইয়ের পর লিবারেশন আর্মির এক কমান্ডারের ভিডিও বার্তা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যেখানে তিনি চিন ও পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, চিন ও পাকিস্তানকে বলছি, এখনই বালুচিস্তান ছেড়ে চলে যাও। আমাদের নেতা জেনারেল আসলাম বালুচ আগেই চিনকে বার্তা দিয়েছিলেন, কিন্তু ওরা কথা শোনেনি। আমাদের মতামত ছাড়াই চিন আমাদের এলাকায় ঢুকেছে। এখন আমাদের পালা। বিএলএ গ্যারান্টি দিয়ে বলছে, চিন-পাকিস্তান বাণিজ্য করিডর ব্যর্থ হবেই। বালুচদের রক্ষা করতে মজিদ ব্রিগেডের আত্মঘাতী যোদ্ধারা প্রাণ দিতে প্রস্তুত। মজিদ ব্রিগেডের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে, যারা চিনা অফিসার, কর্মী, ইঞ্জিনিয়ার এবং চিনের নির্মাণ কাঠামোয় হামলা চালাবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, এখনও সময় আছে, বালুচিস্তান ছাড়ো!