গ্রাফিক্স: শুভ্র শর্ভিন
শেষ আপডেট: 17 April 2025 19:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আট বছরের ফুটফুটে ছেলে। আধেক মুখ এক আঁজলা রোদে ভরা। বাকি অর্ধাংশ আবছায়ায় ঢাকা। গায়ে হাফ হাতা গেঞ্জি।
শুধু হাত দুটোই উধাও৷
হানাদারি যুদ্ধ, ইজরায়েলি সৈনিকদের আক্রমণ কেড়ে নিয়েছে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
গাজার কিশোর মাহমুদ আজ্জুরের এই ছবি তোলার আগে বুক কেঁপে উঠেছিল সামার আবু এলুফের৷ পেশায় চিত্রগ্রাহক। কাজ করেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের হয়ে। অফিস থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ছবি তুলে পাঠানোর বরাত এসেছিল। এমন ছবি, যা পাঠকের হৃদয় দ্রব করবে, চোখে জল আনবে৷
‘বিষয়’ বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে গাজার বিভিন্ন এলাকা ঢুঁ মারছিলেন সামার। তখনই নজর যায় দুই হাত খোয়ানো হৃতসর্বস্ব কিশোর মাহমুদের উপর। কিন্তু নেহাতই রুজিরুটির তাড়নায়, ক্লায়েন্টদের শাবাসি পেতে শাটারে ক্লিক করতে হাত কেঁপে ওঠে সামারের। ভেসে ওঠে ছোট ছেলের মুখ৷ দুজনের চাহনি, মুখের আদল একই রকম!
তবু পেশাদারিত্ব দেখিয়ে, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে এগিয়ে যান সামার। কথা বলেন মাহমুদের মায়ের সঙ্গে। চান ছবি তোলার অনুমতি। অনুমতি মেলে। সামারের আর্জি একটাই: মেঘলা দিন নয়, বোমার আঘাতে ধোঁয়াভরা দিন নয়, যেদিন রোদ উঠবে সেদিনই যেন তাঁকে ডাকা হয়।
সামার আবু এলুফ নিজেও প্যালেস্তাইনের নাগরিক। ইজরায়েলি আগ্রাসনে আস্ত শহরকে চোখের সামনে মাটিতে মিশে যেতে দেখেছেন। বারবার উৎখাত হয়েছেন। তাই ছবি তোলার ঠিক আগের অনুভূতি পেশাগত ফোটো-শিকারীর ছিল না। তার বদলে সহানুভূতিশীল সহ-নাগরিক… হাহাকার চেপে বেঁচে থাকা মায়ের দৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে এক পলক চেয়েছিলেন তিনি।
রোদেভরা উজ্জ্বল দিনে সম্ভবত জীবনের বিষণ্ণতম ছবিটি তুলেছিলেন সামার। পাঠিয়ে দেন পত্রিকা দফতরে। ছেপে বেরোয়। প্রত্যাশামতো সাড়া তোলে। ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটো অ্যাওয়ার্ড’ মঞ্চে এ বছরের সেরা চিত্রশিল্পীর মর্যাদা পেয়েছেন প্যালেস্তাইনের মহিলা চিত্রসাংবাদিক। শ্রেষ্ঠ ফোটোগ্রাফ নির্বাচিত হয়েছে তাঁর তোলা সেই ছবি। ৩ হাজার ৭৭৮ জন চিত্রগ্রাহকের প্রায় ৬০ হাজার ছবির মধ্য থেকে সামারের কাজ রয়েছে প্রথম স্থানে।
আজ আমস্টারডামের পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে হাজির ছিলেন সামার আবু এলুফ। হাতে সেরার খেতাব নিয়ে যদিও এতটুকু গর্বিত নন মহিলা ফোটোগ্রাফার। মাইকে হলভর্তি দর্শকদের সামনে বলতে গিয়ে খানিক থমকালেন। তারপর ফিরে গেলেন সেই রোদেলা সকালে। বললেন, ‘যখন আমি প্রথম মেহমুদকে দেখি, তখন ওকে নিজের ছেলে বলেই মনে হয়েছিল। তারপর ছুটে ছুটে খেলে বেড়ানো বাচ্চাদের তাকালাম। আর আমার দু'চোখ আপনা থেকেই জলে ভরে উঠল।’