চাঁদের ধুলো।
শেষ আপডেট: 10 May 2025 08:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা / চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’। সোনার টুকরো ছেলের কপালে চাঁদের টিম দেওয়ার অভীপ্সা বাঙালি আবেগের সঙ্গে মিশে আছে। তবে কজনেরই বা ধারণা আছে যে চাঁদের ধুলোও (Moon Dust) সোনার (Gold price) চেয়ে দামি।
প্রায় পঞ্চাশ বছর পর চাঁদের মাটি এসেছে পৃথিবীতে। চাঁদে মহাকাশ যান (পড়ুন চিনা চন্দ্রযান) পাঠিয়েছিল বেজিং। সেই অভিযানের নাম ছিল চাং’ই ৫। ২০২০ সালে চাঁদের আগ্নেয় অঞ্চল ‘মন্স রুমকার’ থেকে তারা নানান উপাদান সংগ্রহ করে। একটি রোবট-বাহু (robotic hand) চাঁদের মাটি থেকে ২ কেজি ধুলো ও খনিজ সংগ্রহ করে, যা পরে একটি ক্যাপসুলে ভরে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৭৬ সালের পর এটিই চাঁদের নমুনা সংগ্রহের জন্য সফল অভিযান।
এই প্রথমবার চীনের কাছ থেকে ব্রিটেন ধার নিয়েছে এই মহামূল্যবান উপাদান। ব্রিটেনে, মিল্টন কিঞ্চ শহরের এক অত্যন্ত সুরক্ষিত গবেষণাগারে বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে এই ধূলিকণাগুলি, যেগুলির ওজন মাত্র ৬০ মিলিগ্রাম।
চাঁদের এহেন ধুলো নিয়ে কাজ করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন ব্রিটেনের একমাত্র বিজ্ঞানী, অধ্যাপক মহেশ আনন্দ। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “এই ধুলো সোনার থেকেও মূল্যবান। চিনের এই নমুনাগুলি এতদিন কেউই ব্যবহার করতে পারেননি, ফলে এটি বিশাল এক সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়।” মহেশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার আমন্ত্রণে অধ্যাপক আনন্দ চিন সফর করে নিজ হাতে এই নমুনাগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে যান বিলেতে। চিনের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বিশ্বের মাত্র সাতজন গবেষককে এই নমুনা বিশ্লেষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক আনন্দ।
এই ধূলিকণার মাধ্যমে গবেষকেরা আশা করছেন, চাঁদের উৎপত্তি এবং পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল আকৃতির একটি গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে ছিটকে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকেই চাঁদের জন্ম হয়েছিল – এই তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ মিলতে পারে এই নমুনাগুলির মধ্যে থেকে।
মহেশ আনন্দের দল ‘মাইক্রো’ স্তরে কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর ল্যাবে এই ধূলিকণাকে লেজার দিয়ে উত্তপ্ত করে বিশ্লেষণ করা হবে। তাপমাত্রা ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যার মাধ্যমে কার্বন, নাইট্রোজেন ও গ্যাস বিশ্লেষণ করা হবে।
গবেষণা যত এগোবে, নমুনাগুলি হয়তো ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে, তবে অধ্যাপক আনন্দ বলেন, “এই সামান্য কণাগুলিই আমাদের আগামী বহু বছরের গবেষণার জন্য যথেষ্ট। এখানে ছোট মানেই শক্তিশালী।”
অন্যদিকে, গবেষণা ল্যাবের প্রযুক্তিবিদ কায় নাইট বললেন, “আমি ৩৬ বছর ধরে পাথর কাটার কাজ করি, কিন্তু সরাসরি চাঁদের ধুলো নিয়ে কাজ করব – এটা ভাবতেই শিহরণ হচ্ছে। তবে ভয়ও কাজ করছে, কারণ এটুকুই আছে, এর পরিবর্ত আর পাওয়া সম্ভব নয়।”
চিনের পরবর্তী মিশন, চাং’ই ৬, ইতিমধ্যেই চাঁদের অদেখা দিক থেকে নতুন নমুনা ফিরিয়ে এনেছে, যা নিয়ে এখন কৌতূহল বিশ্বজুড়ে।
অধ্যাপক আনন্দ বলেন, “এই গবেষণা শুধু মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ই রচনা করবে না, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। আমি আশা করি, অন্যান্য দেশও এই পথে এগিয়ে আসবে।”