দেশে ফেরার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী ও বায়ুসেনা অফিসার কে নচিকেতা।
শেষ আপডেট: 25th July 2024 20:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৯৯৯। সিকি শতক আগের সেই কাশ্মীর যুদ্ধের রোমহর্ষক কাহিনী উঠে এল ভারতীয় বিমান বাহিনীর তৎকালীন গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামবামপতি নচিকেতা রাও ওরফে কে নচিকেতা রাওয়ের বর্ণনায়। ২০১৭ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর এই প্রথম কার্গিল যুদ্ধের অজানা কথা ফাঁস করলেন অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা অফিসার।
মিগ-২৭ যুদ্ধ বিমানে ছিলেন নচিকেতা। শ্রীনগর থেকে রওনা দিয়েছিলেন চারজন। গন্তব্য ছিল কাশ্মীরের মুনথু ধলো। সেখানে তখন পাকিস্তানের বিরাট সামরিক ঘাঁটি। আচমকা তাঁদের বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। দিনটা ১৯৯৯ সালের ২৭ মে। বিমান দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে প্যারাশুটের সাহায্যে ফ্লাইট থেকে বেরিয়ে আসেন। তারপরের ঘটনা রোমহর্ষক।
সংবাদসংস্থা এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়া থেকে মুক্তি, সেনা অফিসারের সাক্ষাৎকারের পরতে পরতে রয়েছে উত্তেজনা।
নচিকেতার কথায়, "কিছুপরেই জ্ঞান ফিরে আসে। চারিদিকে বরফ। গুলির শব্দে কান পাতা দায়! বুঝতে পারছিলাম না, কোথায় রয়েছি। একে একা, তাই আবার সঙ্গে অস্ত্র বলতে ছোট পিস্তল আর ১৬ রাউন্ড গুলি!"
একটি বড় পাথরের পিছনে নিজের শরীরটাকে লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন। "হঠাৎ ওরা চলে এল! কোনও কথা না বলে আমার মুখের মধ্যে তখন AK-47 এর ব্যারেল। চোখের সামনে মৃত্যুকে দেখছি এত কাছ থেকে! তবু আমি বন্দুকধারীর ট্রিগারের আঙুলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, সে এটা টেনে নেবে নাকি টানবে না!" বলেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ারফোর্স অফিসার।
২৫ বছর পর দেশকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সেদিন কার্গিল যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হওয়া সেই পাকিস্তানি সেনাকর্তাকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন নচিকেতা। তাঁর কথায়, "বাকিরা বলেছিল, মেরে ফেলতে। উনি কিন্তু বাকিদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে একজন সৈনিক হিসেবে আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। তাই ওনার প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা থাকবে, উনি না চাইলে সেদিনই শহিদ হয়ে যেতাম!"
পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁকে উদ্ধারের পর জানতে পেরেছিলেন ভারতসীমান্ত থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিশেষ বিমানে ইসলামাবাদ হয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তরিত করা হয় ভারতের বায়ুসেনা অফিসারকে।
পরের ইতিহাস আরও করুণ। যে ঘুপচি সেলে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে ছিল না পর্যাপ্ত আলো, না দেওয়া হত খাবার। উল্টে চলতো নিদারুণ অত্যাচার!
খাবার দেওয়া হত না কেন? অবসরপ্রাপ্ত এয়ারফোর্স অফিসার বলছেন, "ওরা সবধরনের কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদি আমার কাছ থেকে ভারতের সামরিক বিষয়ে কোনও তথ্য মেলে। যুদ্ধক্ষেত্রে এটাই রীতি! তবে আমি ভাগ্যবান থার্ড ডিগ্রি প্রয়োগের আগেই আমার মুক্তি ঘটেছিল।"