মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী।
শেষ আপডেট: 25th March 2025 00:59
শঙ্খদীপ দাস, লন্ডন
একদা শিকাগো সফরে যাওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারও আগে একবার চিন সফরে যাবেন বলে দিনক্ষণ স্থির করে ফেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাউথ ব্লক অনুমতি না দেওয়ায় দুটি সফরের একটিও হয়নি। দিল্লি-কলকাতা সেই তিক্ত পর্ব যেন এক দূরের গ্রহ। বরং সোমবার এক নতুন মাইলফলক যেন তৈরি হল লন্ডনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে বাংলায় লগ্নি টানার জন্য দৌত্য করলেন লন্ডনে স্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী। স্পষ্ট কথায় বললেন, বাংলায় লগ্নির জন্য বিলেতের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে এই দূতাবাস যথাসাধ্য করবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে এদিন লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাস তথা ইন্ডিয়া হাউজে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন দোরাইস্বামী। সেই সভায় কী আলোচনা হল, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে লগ্নির সুযোগ ও সুবিধা নিয়ে কী ধরনের মত বিনিময় হল তা গুরুত্বপূর্ণ বইকি। তবে বৃহৎ ছবিটা যেন আরও ইতিবাচক। তা হল সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ছবি। যে ছবিতে দেখা গেল, বাংলায় বিনিয়োগ টানার ব্যাপারে নয়াদিল্লিও যথাযথ সঙ্গত করল। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানায় এই প্রথম সাউথ ব্লকের থেকে এমন সহযোগিতা পেল কলকাতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর নিয়ে বাংলার ঘরোয়া রাজনীতিতে বিজেপি যখন নানান টীকা ও টিপ্পনি করছে, তখন সোমবার সন্ধের এই ছবিটা হয়তো একটু হতাশই করতে পারে তাঁদের।
এদিনের সভার শুরুতে তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় দোরাইস্বামী ব্যাখ্যা করেন, ভারত ও ব্রিটেনের পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিস্থিতি বর্তমানে রয়েছে। এবং সহযোগিতার নতুন কোন কোন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সেই সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমান দুনিয়ায় কেউই কারও থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাই সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাটাই জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল দক্ষ শ্রমিক। কেন্দ্রের সরকারও সমীক্ষায় জানিয়েছে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি রয়েছে। বাংলা বিনিয়োগ বান্ধবও বটে। শ্রম নিবিড় শিল্পে আরও বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী তিনি। বাংলার হস্তশিল্প, সাংস্কৃতিক মূলধন ও মেধা উৎকর্ষের কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এও জানান, রাজ্যে লগ্নির পথ সহজ করতে সম্প্রতি একটি সমন্বয় কমিটিও গড়ে দিয়েছেন তিনি।
এ ধরনের সমন্বয় কমিটি গঠনের বার্তা যে বিদেশি লগ্নিকারীদের মধ্যেও স্পষ্টভাবে যাওয়া উচিত, দুঁদে কূটনীতিক বিক্রমের তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ যেন বিষয়টি আরও সহজে ব্যাখ্যা করেন।
মনোজ পন্থ তো বটেই পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, শিল্পমহল থেকে এমন একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের ব্যাপারে আর্জি ছিল। কলকাতায় সম্প্রতি বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি তা ঘোষণা করেন। সেই কমিটি গঠন করে প্রথম বৈঠকও হয়ে গিয়েছে।
ভারতীয় দূতাবাসে এদিনের সভা থেকে বাংলায় শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। আলোচনায় উঠে আসে অটো মোবাইল, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ডায়মন্ড শিল্প, ফুড প্রসেসিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে লগ্নির প্রসঙ্গও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফরে এই বৈঠকই ছিল প্রথম সরকারি কর্মসূচি। সেদিক থেকে বলা যেতে পারে একটি ইতিবাচক ধারায় শুরু হল তাঁর এই সফর। বস্তুত সেটাকেই আরও প্রসারিত করে মঙ্গলবার লন্ডনে বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আরও সবিস্তারে আলোচনা হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফরে শিল্প ও বণিক মহলের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, উমেশ চৌধুরী, সত্যম রায়চৌধুরী, রুদ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ এদিন দূতাবাসের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। সভায় হর্ষ বলেন, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। সমস্যা শুধু একটাই। প্রচারে ও ধারণা তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলা। ঠিক এই জায়গাতেই দূতাবাসের সাহায্য চাই। তাহলেই লগ্নি আসবে বলে তাঁর বিশ্বাস।