মুম্বই হামলার মূল ঘাঁটি মুরিদকে মারকাজ। ফাইল চিত্র।
শেষ আপডেট: 7 May 2025 10:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় অংশ নেওয়া আজমল কাসভ যেখান থেকে সন্ত্রাসের পাঠ নিয়েছিল, সেই পাকিস্তানের মুরিদকে ‘মারকাজ’-এর উপর এবার ভারতীয় সেনা সরাসরি আঘাত হানল। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনার সমন্বয়ে চালানো এই অভিযানে ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয় পাকিস্তান ও পিওকে-তে। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল লস্কর-ই-তইবার প্রধান ঘাঁটি, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের কাছে মুরিদকে শহরের ‘মসজিদ ও মারকাজ তইবা’।
জানা যাচ্ছে, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশাল ৮২ একরের কমপ্লেক্সটি কেবল একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, এটি ছিল সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ, মগজধোলাই, অস্ত্রচর্চা এবং নিয়োগের প্রধান ঘাঁটি। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই কমপ্লেক্সেই ছিল প্রচার ও ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র, ‘সুফা অ্যাকাডেমি’ নামে পুরুষ সন্ত্রাসীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নারীদের জন্য আলাদা ‘ইন্দোক্ট্রিনেশন সেন্টার’, মাদ্রাসা ও আবাসিক হোস্টেল, জিহাদি নেতাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
জানা যাচ্ছে, এখানে প্রতি বছর প্রায় হাজার ছাত্র ভর্তি হয় যারা ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে আসত।
এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিজে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক কোটি ভারতীয় টাকা সরাসরি এই প্রকল্পে দান করেছিলেন বিন লাদেন। এই তথ্য ভারতের কাছে বহু বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবার পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী সেখানেই লক্ষ্য হানে।
মুম্বইয়ের ২৬/১১ জঙ্গি হামলার অন্যতম মূল দোষী আজমল কাসভ এই মুরিদকের মারকাজেই ‘দওরা-ই-রিববাফ’ নামক বিশেষ গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণ পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চালানো হত। এখান থেকেই কাসভকে ভারতে হামলার জন্য তৈরি করে পাঠানো হয়েছিল।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটন কেন্দ্র বৈসারণে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন The Resistance Front। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়।
মুরিদকে মারকাজ কেবল একটি স্থাপনা ছিল না, এটি ছিল লস্কর-ই-তইবার আদর্শ, পরিকল্পনা ও কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ধ্বংস নেমে আসা মানেই, লস্করের আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কে বড় আঘাত। এই কেন্দ্র ধ্বংস করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দিল ভারত।