Date : 17th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কয়েকমাসের ব্যবধানে আবার ডোমজুরের একটি কারখানায় আগুন লাগল, ঘটনাস্থলে দমকলের দু'টি ইঞ্জিনশক্তির স্বার্থেই রাশিয়ার পাশে ভারত, ন্যাটো প্রধানের হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দিল না নয়াদিল্লিভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হতে পারে সামনের সপ্তাহেই! কম দামে মিলবে হুইস্কি, ওয়াইননিকোপার্কে যুবকের মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ গাফিলতির, ময়নাতদন্তে হৃদরোগে মৃত্যুর ইঙ্গিতকল্যাণী স্টেডিয়ামেই হবে ডার্বি, তবে পিছল দিনমিলিয়ে মিশিয়ে হাজারের উপর নামকরণ করে ফেলেছেন মমতা, এখনও তালিকা অফুরন্ত, জানালেন নিজেইগোপালগঞ্জ: পুলিশ রিপোর্টে আ-লিগ কর্মীদের মৃত্যুর কারণ লেখা নেই, সেনাকে আড়াল করাই লক্ষ্য?আইআইটি সমাবর্তনে 'কালা চশমা' মুহূর্ত, 'কুল' ছাত্র-প্রফেসরের রসায়ন ভাইরালউত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডোরে ভবঘুরের দেহ খুবলে খেল কুকুরমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হবে এবারের ডুরান্ডের উদ্বোধন
Jose Mujica - World's 'Poorest President'

রাষ্ট্রপতি যখন জনতার 'প্রিয় বন্ধু'! বৈধ করেন গাঁজা সেবন, চিরবিদায় নিলেন 'বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপতি'

হৃদয় দিয়ে দেশ শাসন করতেন সকলের প্রিয় 'পেপে', জীবন যেন আস্ত সিনেমা, চিরবিদায় নিলেন 'বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপতি'
 

রাষ্ট্রপতি যখন জনতার 'প্রিয় বন্ধু'! বৈধ করেন গাঁজা সেবন, চিরবিদায় নিলেন 'বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপতি'

হোসে মুজিকা (গ্রাফিক্স: দিব্যেন্দু দাস)

অন্বেষা বিশ্বাস।

শেষ আপডেট: 15 May 2025 13:30

দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'ক্ষমতা নয়, হৃদয় দিয়েই দেশ শাসন করা যায়...'

এখনকার দিনে যখন রাষ্ট্রনেতারা বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকেন, বিশেষ বিমানে চড়েন, কনভয়ের শব্দে মুখরিত হয় রাস্তাঘাট, তখন এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান সারা জীবন কাটালেন একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে, পুরনো গাড়ি চালিয়ে, মাঠে চাষ করে, আর বেতনের ৯০ শতাংশ জনসাধারণের মধ্যে দান করে। ভাবছেন তো তিনি কে? আর কেউ নন, হোসে মুজিকা—উরুগুয়ের ৪০তম প্রেসিডেন্ট, বিশ্বে খ্যাত ‘সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবে। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। থেমে গেল পৃথিবীর এক 'ব্যতিক্রমী' হৃদয়। বয়স হয়েছিল ৮৯।

প্রাসাদ নয়, তাঁবু পাতা ঘরই ছিল ‘রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন’

রাষ্ট্রপতি হয়েও কোনওদিন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পা রাখেননি মুজিকা। স্ত্রী ও তিন পেয়ে কুকুর ম্যানুয়েলাকে নিয়ে থাকতেন একটা ছোট, প্রায় ভাঙাচোরা বাড়িতে। কোনও ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না তাঁর। মাসে ১২,৫০০ মার্কিন ডলার বেতন পেতেন, কিন্তু নিজের জন্য রাখতেন কেবল ১০ শতাংশ। বাকি সবটাই দান করতেন। তিনি বলতেন, “উরুগুয়ের বহু মানুষের জীবন তো এর চেয়েও কমে চলে, আমার তো বেশ চলে যাচ্ছে। কী হবে এত টাকা নিয়ে।”

জীবনটাই আস্ত একটা উপন্যাস

তাঁর জীবনের গল্পটাই যেন একটা উপন্যাস। যে উপন্যাস বারবার পড়া যায়। একসময় হোসে মুজিকা ছিলেন 'টুপামারো' নামের বামপন্থী গেরিলা সংগঠনের সদস্য। ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। ছ'বার গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পুলিশের হাতে, ১৪ বছর জেলেও কাটিয়েছেন। ১৯৭২ সালে তো মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। মার্কিনপন্থী শাসনের অধীনে সেই জেল ছিল অত্যাচারের এক নারকীয় ঠিকানা। ফলে উপন্যাসের থেকে কিন্তু কম কিছু না! তাই তাঁর জীবন কাহিনি অবলম্বনে নেটফ্লিক্স একটা আস্ত সিনেমাও বানিয়ে ফেলেছে। নাম- A Twelve Year Night (অ্যা টুয়েল্ভ ইয়ার নাইট)।

“আমি আগে কৃষক, পরে রাষ্ট্রপতি”

রাষ্ট্রপতি হয়েও নিজের পরিচয় দিতেন ‘চাষি’ হিসেবে। নিজের গাড়ি নিজেই চালাতেন। কখনও ফার্স্ট ক্লাসে বিমানে চড়েননি, ইকোনমি ক্লাসেই সফর সারতেন। রাষ্ট্রীয় কাজের ফাঁকে সময় করে স্ত্রীর সঙ্গে কৃষিকাজও চালিয়ে যেতেন। কোথাও কোনও প্রোটোকল নেই, কোথাও কোনও অহংকার নেই—তিনি ছিলেন যেন সাধারণ মানুষের মধ্যেই একজন।

নীতিতে বাম, দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তব

২০১০ সালে উরুগুয়ের রাষ্ট্রপতি হন। অথচ দলীয় মনোনয়ন পেতে তাঁকে লড়তে হয়েছিল প্রবল। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি উরুগুয়ের দুর্বল অর্থনীতিকে একদম উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি বিবিসি-এর মতে, মুজিকার নেতৃত্বে গোটা লাতিন আমেরিকার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির মডেল হয়ে উঠেছে উরুগুয়ে। সব তো ভাল হতে পারে না! সমালোচনা থাকবে না, তা কী করে হয়?

ফলে তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও ছিল। তিনি উরুগুয়েতে গাঁজা বৈধ করেছিলেন। বলেছিলেন—"আমি গাঁজা জিনিসটাকে সমর্থন করি না। কিন্তু বাস্তবটা মেনে নিতে হবে। দেশের লক্ষাধিক মানুষ এটি সেবন করেন, তখন চুপ করে বসে থাকা মানে মাদকচক্রের হাতে তাদের ঠেলে দেওয়া।"

তিনি সমলিঙ্গ বিবাহ ও গর্ভপাত গোটা দেশে বৈধ করে দিয়েছিলেন। ক্যাথলিক দেশ উরুগুয়েতে যা ছিল অভূতপূর্ব একটা কাজ। তবে অস্ত্র তৈরি করা ও যুদ্ধবাজ রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন বরাবর। তিনি বারবার বলতেন, "রাষ্ট্রনেতারা যেন যুদ্ধের খরচ বন্ধ করে, সেই খরচ তো মানুষের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।"

শেষযাত্রায় বিদায় ‘পেপে’র

দেশবাসী ভালবেসে তাঁকে ‘পেপে’ বলে ডাকত। হোসে মুজিকা ছিলেন তাঁদের মধ্যে থেকেই উঠে আসা একজন—নেতা নন, যেন পরিবারের এক আপনজন। প্রটোকলের জাঁকজমক ছাপিয়ে তাঁর সাদামাটা জীবনযাপন ছুঁয়ে যেত লাখো হৃদয়। সাধারণ মানুষের এই ‘পেপে’ ছিলেন বিশ্বাসের আরেক নাম। শুধু উরুগুয়েতে নয়, গোটা পৃথিবীর বামপন্থীদের কাছে তিনি ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

সেই কিংবদন্তি চিরবিদায় নিলেন। রেখে গেলেন অনেক সমালোচনার ভিড়ে একটা গভীর প্রশ্ন—রাষ্ট্রপতি কি শুধুই ক্ষমতার প্রতীক? নাকি তিনি হতে পারেন জনতার 'প্রিয়' বন্ধু, এক আশ্রয়, এক ভালবাসার মানুষও? ‘পেপে’র জীবন যেন তার জবাব নিজেই দিয়ে যায় বারবার—ক্ষমতা নয়, হৃদয় দিয়েই দেশ শাসন করা যায়।
 


ভিডিও স্টোরি