শেষ আপডেট: 18th September 2024 12:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মাত্র ৩ গ্রাম বিস্ফোরক! তাতেই লেবানন কাঁপিয়ে দিয়েছে ইজরায়েলের 'দুর্ধর্ষ' চর সংস্থা মোসাদ। লেবাননের হিজবুল্লা জঙ্গিগোষ্ঠী কয়েক মাস আগে তাইওয়ানের একটি কোম্পানিকে পেজার সরবরাহের বরাত দিয়েছিল। আর সেই বরাতেরই ৫ হাজার পেজারে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দিয়েছিল মোসাদ। এরকমই অভিনব কায়দায় জঙ্গি নিকেশের ছক কষে মোসাদের চর বাহিনী। লেবানন-সিরিয়ায় অধিকাংশ শহরে মঙ্গলবার হঠাৎ করে এই পেজারগুলি ফেটে পড়ে। যাতে এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু ও ৪০০০ জন জখম হয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরে জানিয়েছে, গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির কাছ থেকে হিজবুল্লার হাতে পেজার পৌঁছনোর আগেই মোসাদ বাহিনী সেগুলিতে মাত্র ৩ গ্রাম করে বিস্ফোরক গুঁজে রাখে। যদিও তাইওয়ানের ওই কোম্পানি বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ওই কাজ করেনি। যেগুলিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলি তারা তৈরি করেনি বলে দাবি করেছে।
হিজবুল্লা গোষ্ঠী এই কাজের জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেছে। কারণ, ইজরায়েল ও হামাসের যুদ্ধে হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল লেবানন-সিরিয়ার হিজবুল্লা জঙ্গিদল। যদিও ইজরায়েল এখনও এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য করেনি। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এটা মোসাদেরই কাজ। প্রতিটি পেজারের ব্যাটারির নীচে ৩ গ্রাম করে বিস্ফোরক রাখা ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।
পেজার বিস্ফোরণের নেপথ্যে কী ধরনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রয়েছে?
যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয় এটি। পেজারের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাক করা যায় না। বহু সময় আগে এটি পুরোদস্তুর ব্যবহার হত। তবে মোবাইল আসার পর তার ব্যবহার কমেছে। কিন্তু হিজবুল্লা গোষ্ঠী এই পেজার ব্যবহার করে, যাতে তাদের লোকেশন ট্র্যাক না করা যায়। সাধারণত হাতে বা পকেটে থাকে এই পেজার।
মূলত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ পাঠায় ও গ্রহণ করে এই পেজার। ডিভাইসটির ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়। মেসেজ এলে ফোনের মেসেজ টোনের মতো আওয়াজও হয় তাতে। ২০০০ সালের দোরগোড়া পর্যন্ত বহু মানুষ পেজার ব্যবহার করতেন। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের পর থেকেই পেজারের ব্যবহার কমতে থাকে।
এই পেজারের মধ্যেই বিস্ফোরক রাখার ছক কষে মোসাদ। কারণ পেজার বেজে উঠলে তাতে বোতামে আঙুল ঠেকালেই তা ট্রিগারের কাজ করবে। এভাবেই হয় পেজার তৈরি সময়, নয়তো তাইওয়ান থেকে পাঠানোর সময় কিংবা ডুপ্লিকেট পেজার হিজবুল্লার হাতে এসেছিল, যা বরাত পাওয়া সংস্থার মতো দেখতে হলেও তাদের তৈরি নয়। যাই হোক এটা অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন যুদ্ধকৌশল।
এর আগে বিশ্বের কোথাও এই প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে?
না। লেবাননেই প্রথম এই প্রযুক্তি-বিজ্ঞানের প্রয়োগ হল। এর আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল, যা আপনা আপনি ফেটে যাবে। সাধারণত এই ক্ষেপণাস্ত্র রাখা হয় অস্ত্রাগারে। কিন্তু, আগাম টের পেয়ে যাওয়ায় তা শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। তবে মোবাইলে বহুবার দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বিস্ফোরক রেখে তাকে ট্রিগার হিসাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু, এই পদ্ধতি এবারেই প্রথম।