হামলার জবাবি অভিযানের ইরান নাম রেখেছে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’। অথবা তৃতীয় দফার ‘সাচ্চা ওয়াদা’।
একদিকে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল, অন্যদিকে চিরশত্রু ইসলামি দেশ ইরান।
শেষ আপডেট: 14 June 2025 07:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইরানের বুকে অভিযানের ইজরায়েল নাম দিয়েছিল ‘জাগ্রত সিংহ’ বা ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এবার সেই হামলার জবাবি অভিযানের ইরান নাম রেখেছে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’। অথবা তৃতীয় দফার ‘সাচ্চা ওয়াদা’ কেননা, এর আগে এই নামেই দুবার ইজরায়েলের মাটিতে আঘাত হেনেছিল তেহরানের সরকার। একদিকে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল, অন্যদিকে চিরশত্রু ইসলামি দেশ ইরান। তাই সামরিক অভিযানের মধ্যেও রয়েছে ধর্মের সুড়সুড়ি। ইজরায়েল নামটি নিয়েছে বাইবেল থেকে। তেমনই ইরানি অভিযানের নামের উৎস কোরান।
ইসলামে সাচ্চা ওয়াদা বা ট্রু প্রমিস হল, যে মানুষের মনে দায়িত্ববোধ ও সত্যপূরণের নির্ভেজাল ঐকান্তিক ইচ্ছা আছে। একে বিশ্বাস, আস্থা, দায়িত্ববোধ বলে গণ্য করা হয়। সত্য পূরণের ব্যর্থ হওয়া অথবা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা অপরাধ। যেমন- কোরানে বর্ণিত আল্লার প্রতিশ্রুতি হল সবসময়ের জন্য সত্য এবং আশা ও বিশ্বাসের উৎস।
ওয়াদা হল আরবি ভাষায় আল-আহদু। আল-আহদু মানে প্রতিশ্রুতি। যার অর্থ হল অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি পালনের চুক্তি, কাউকে কথা দেওয়া এবং পালন করা। সুরাহ আল-মাইদাহ-এর প্রথম ছত্রেই রয়েছে, আল্লা তাঁর ভক্তদের বলছেন, তোমরা যারা আমাকে বিশ্বাস করো। তারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা কোরো। এভাবে আল্লার বিভিন্ন বাণীতে রয়েছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার নির্দেশ। তার গুরুত্ব ও ভঙ্গের অপরাধ অমার্জনীয়।
সে কারণেই সিয়া মুসলিম রাষ্ট্র ইহুদি ও খ্রিস্টান বিদ্বেষী এই অভিযানের নাম রেখেছে ট্রু প্রমিস। যার অর্থ হচ্ছে, দেশ ও ধর্ম রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন। দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধতার প্রমাণ। দেশের সংহতি-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার রক্ষার প্রমাণ হচ্ছে এই অভিযান।
হিব্রু বাইবেলের পাতায় রাইজিং লায়নের উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ হল- শক্তিশালী ইজরায়েলের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী নিশ্চিত করা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একটি ছবিতে দেখা যায় যে, তিনি জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়াল, যা কিনা ইহুদিদের সবথেকে পবিত্র প্রার্থনাস্থল, সেখানে পাথরের খাঁজে একটি হাতে লেখা কাগজের টুকরো গুঁজে দিচ্ছেন। সেটাই ছিল ইরানের বুকে হামলার পূর্ব প্রার্থনা।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী দফতরের তরফে একটি ফটো প্রকাশ করা হয়। যেখানে লেখা ছিল, দেশের মানুষ সিংহের মতো ঘুম থেকে জেগে ওঠে। এই কথাটির আদি জন্মস্থল আসলে হিব্রুতে লেখা বাইবেলের ২৩:২৪ ছত্র। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘দেখো, মানুষ একদিন বিরাট সিংহের মতো জেগে উঠবে, যুবক সিংহের মতো বিক্রমে উঠে দাঁড়াবে। সে শিকারের মাংস না খাওয়া পর্যন্ত এবং রক্তপান না করা পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না।‘
এই ছত্রটি হল ‘বালাম’-এর প্রথম দৈববাণীর অংশবিশেষ। বালাম ছিলেন একজন অ-ইজরায়েলি সাধু ও দেবপুত্র। যেখানে তিনি ইজরায়েলের শক্তি-সামর্থ্যের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন। যাকে এক সিংহের প্রতাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। সিংহ যেমন ঘুম ভাঙার পর শিকার না করে তার রক্ত-মাংস না খাওয়া পর্যন্ত ঘুমোয় না, তারই ব্যাখ্যা ছিল তাঁর বাণীতে। বালাম আদপেই ইজরায়েলি নন। তাঁকে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন রকমের মর্যাদা দিয়ে থাকেন। যেমন-দেবদূত, ঈশ্বরপ্রেরিত দূত, ঈশ্বরের অবতার এমনকী শয়তানের প্রতিভূও বলেন কেউ কেউ।