গত কয়েক দিনে চিন (China) থেকে ইরানে পরপর তিনটি বোয়িং ৭৪৭ কার্গো বিমান যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাহলে কি গোপনে ইরানকে অস্ত্র সাহায্য করছে চিন?
খামেইনি ও শি জিনপিং। গ্রাফিক্স: দ্য ওয়াল
শেষ আপডেট: 19 June 2025 15:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইজরায়েল-ইরান সংঘাতের (Israel Iran War) আবহে আচমকাই উত্তেজনা ছড়িয়েছে আরেকটি সম্ভাবনাকে ঘিরে। গত কয়েক দিনে চিন (China) থেকে ইরানে পরপর তিনটি বোয়িং ৭৪৭ কার্গো বিমান যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাহলে কি গোপনে ইরানকে অস্ত্র সাহায্য করছে চিন?
সাম্প্রতিক সময়ে চিন ও ইরানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আগেই বিশ্ব কূটনীতিতে আলোচনা ছিল। ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেইনি ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কৌশলগত সম্পর্ক ও পারস্পরিক নির্ভরতা সুবিদিত। কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের পরিস্থিতিতে চিন থেকে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের সম্ভাবনা বৃহত্তর ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত অনেকের। তাঁরা মনে করছেন, পশ্চিম এশিয়ার সংঘাতে বেজিং এবার আরও সরাসরি ভূমিকা নিতে পারে।
কী ঘটেছে?
শনিবার, ইজরায়েলের প্রথম বিমান হামলার ঠিক পরদিন চিন থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানের রওনা হয়। রবিবার ও সোমবারও একই রুটে আরও দুটি বিমান ইরানের উদ্দেশে উড়ে যায়। এই মডেলের বিমান সাধারণত ভারী সামরিক যন্ত্রপাতি পরিবহণে ব্যবহার করা হয়। তিনটি বিমানই উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তানের উপর দিয়ে ইরানের দিকেই গেছে। কিন্তু লুক্সেমবার্গকে গন্তব্য দেখালেও বিমানগুলোর ট্র্যাক ইউরোপে যায়নি। মাঝপথেই রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব ‘ডার্ক ফ্লাইট’ (Dark Flight) আন্তর্জাতিক নিয়ম ভেঙে গোপনে সামরিক মালপত্র পৌঁছে দেওয়ারই ইঙ্গিত দেয়।
চিন কেন ইরানকে সাহায্য করতে চাইবে?
এর পেছনে আছে কৌশলগত ও আর্থিক স্বার্থ। চিন ও ইরান— দু’জনেই আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে। চিনের প্রায় ৯০ শতাংশ তেল আমদানি হয় ইরান থেকে। দিনে প্রায় ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল চিনে রফতানি করে ইরান। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে এই তেল রফতানি চলে ‘ডার্ক ট্যাঙ্কার’ ব্যবস্থায়, যেখানে জাহাজগুলির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ থাকে। চিনের শানডং অঞ্চলের ছোট ছোট ‘টিপট’ রিফাইনারিগুলি এই সস্তার তেল কিনেই টিকে রয়েছে।
চিন এই তেলের বিনিময়ে ডলার নয়, দেয় ইউয়ান। আর ইরান সেই ইউয়ানেই কেনে চিনা সামগ্রী। ফলে অনেকেই বলছেন, এটি একপ্রকার “ঔপনিবেশিক ফাঁদ”।
এই মুহূর্তে ইরানের খার্গ দ্বীপ, যেখান থেকে অধিকাংশ তেল রফতানি হয়, সেখানে ইজরায়েলের হামলা হলে চিনের সস্তা জ্বালানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সৌদি আরব বা ইউএই হয়তো ইরানের তেলের চাহিদা কিছুটা পূরণ করতে পারবে, কিন্তু তার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে পড়বে চিনা অর্থনীতিতে।
চিনের অতীত ভূমিকা
এটাই প্রথম নয়। অতীতেও ইরানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উপকরণ পাঠিয়েছে চিন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতেও চিনের পক্ষ থেকে গোপন অস্ত্র সাহায্য পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে চিন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সব পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, চিন সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ইরানকে কিছু না কিছু সাহায্য করবেই। চলতি ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে যদি আয়াতোল্লা খামেইনির পতন ঘটে, তবে তা চিনের জন্যও এক বড় ধাক্কা হবে।