শেষ আপডেট: 14th December 2024 15:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একে হিজাব নেই। তার উপর স্বল্পবসনে গান গেয়ে ইরানে বিপ্লব ঘটিয়ে দিলেন এক গায়িকা-সুরকার যুবতী। অনলাইন কনসার্টে হিজাব মাথায় না দিয়ে, সরু সুতোর মতো পোশাকে ইউটিউব কনসার্টে গান গেয়ে ইসলামি রাষ্ট্রের কঠিন আইনের গরাদ ভেঙে দিয়েছেন পারাসতু আহমদি। আর তা নিয়ে থরহরি কম্প দেখা দিয়েছে শরিয়ত আইনের অনুগামী ইরানি প্রশাসক মহলে। বুধবার আহমদির এই অনলাইন কনসার্ট ইতিমধ্যেই তারিফ কুড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভাইরাল ভিডিওতে তাঁকে অসংখ্য কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা দুনিয়া।
একে তো মাথায় হিজাব ছিল না। তার উপর আহমদির পরনে ছিল কাঁধ খোলা সরু সুতোর মতো একটি ওয়ানপিস গাউন। যা ইরানের তথাকথিত সরকারের আইন বিরোধী। ইরানেই শ্যুট করা ওই ইউটিউব কনসার্ট ভাইরাল হওয়ার পর চুপ করে বসে নেই পুলিশ-প্রশাসনও। আহমদির বিরুদ্ধে কঠোর আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে নেট দুনিয়াতেও।
ইরানে প্রকাশ্যে মহিলাদের মঞ্চ উপস্থাপনা নিষিদ্ধ। হিজাব ছাড়া প্রকাশ্যে বেরনো নিষিদ্ধ। এমনকী মহিলাদের গান গাওয়াও নিষিদ্ধ। এইসব নিয়মের বেড়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন আহমদি। দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সরাইখানায় তাঁর এই অনুষ্ঠানটি দর্শকহীনভাবে শ্যুট করা হয়। আহমদির চারজন পুরুষ সহযোগী বাজনদার মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে বাজিয়েছেন। জায়গাটি একসময় সিল্ক রুট ব্যবসায়ী-পর্যটকদের বিশ্রামের জায়গা ছিল। অনুষ্ঠানটি ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। শনিবার পর্যন্ত ইউটিউবে ১০ লক্ষ ২০ হাজার ভিউ হয়েছে।
কনসার্টের শুরুতেই আহমদি বলেন, আমি পারাসতু। দেশের জন্য, দেশের হয়ে গান গাইতে আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু ওরা আমাকে গান গাইতে দেয় না। ওরা আমাকে চুপ করিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু, আমি গান গাইতে চাই। ওরা বাধা দিতে চায়। আজ আমার কণ্ঠ আপনাদের কাছে পৌঁছাক। একটি কাল্পনিক কনসার্টে আমি আপনাদের আমার গান শোনাতে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি সুন্দর ও মুক্ত-স্বাধীন একটা দেশের।
আহমদি তাঁর একটি গান উৎসর্গ করেন ২০২২ সালে ইরানের নীতি পুলিশের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে। যে মৃত্যু ইরান জুড়ে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। নারী, জীবন, স্বাধীনতার স্লোগান মুখে লাখে লাখে মহিলা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে উত্তাল করে দিয়েছিলেন গোটা দেশ। তাঁর একটি গানের একটি কলি হল, দেশের তরুণের রক্তে রাঙানো দিন।
ইরানে বছরের পর বছর ধরে আইন রয়েছে যে, মহিলা শিল্পীরা কেবলমাত্র মহিলা দর্শকদের সামনেই গাইতে পারবেন। কিন্তু, তাঁর গান সম্প্রচার এবং তা ছড়িয়ে পড়ার পরেই আহমদির বাড়িতে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা সংস্থার চররা। তেহরানের গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশে আহমদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। ইরানি প্রশাসন জানিয়েছে, দেশের আইন ভঙ্গ করার অপরাধে আহমদি ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, দেশের সতিত্ব ও হিজাব সংস্কৃতি আইন অনুসারে আহমদিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।