সোমালিয়ার জলদস্যুদের জব্দ করল ভারতীয় বাহিনী। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 31st January 2025 07:56
এই অভূতপূর্ব অভিযানের স্বীকৃতিস্বরূপ উইং কমান্ডার সাক্সেনাকে বায়ু সেনা পদক দেওয়া হয়েছে। তার পরেই সামনে এসেছে এই কৃতিত্বের কথা। জাহাজটি পুনরুদ্ধার করে ৩৫ জন জলদস্যুকে আটক করে ভারতীয় সেনা। এই অভিযানে জাহাজের ক্রুদেরও মুক্ত করা হয়।
ভারতীয় জাহাজের ক্রুদের মুক্ত করার পাশাপাশিই ওই মিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, জলদস্যু-নিয়ন্ত্রিত জাহাজটিকে দখল করে নেওয়া, যা শুধু বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপরেই আক্রমণ চালাচ্ছিল না, ১৫ মার্চ ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা-র উপরেও গুলি চালিয়েছিল। একটি নজরদারি ড্রোনও নামিয়েছিল।
এই উৎপাত বন্ধ করতেই বড় অভিযানের পরিকল্পনা করে ভারতীয় সেনা। উইং কমান্ডার সাক্সেনার নেতৃত্বে C-17 বিমানে করে দুটি Combat Rubberised Raiding Craft (CRRC) বোট ও ১৮ জন মার্কোস কমান্ডো-কে যুদ্ধের সরঞ্জাম-সহ এয়ারড্রপ করা হয়। এই মার্কোস বাহিনী ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো দল, যারা সমুদ্র অভিযান ও জলদস্যু দমন অভিযানে বিশেষ দক্ষ।
জানা গেছে, অভিযানের সময় বিমানটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ১,৪৫০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২,৭০০ কিলোমিটার) এবং ভারতের ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিয়নের (FIR) বাইরে ৫৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। অভিযানটি যাতে শত্রুপক্ষের নজরে না আসে, সে জন্য উইং কমান্ডার সাক্সেনা বিমানটির সমস্ত ট্রান্সমিশন বন্ধ রেখে, সমুদ্রের ওপর দিয়ে নিচু করে বিমান উড়িয়ে গোপনে প্রবেশ করেন এবং সন্ধ্যার সময় এয়ারড্রপটি সফল করেন।
যে জায়গাটি নির্ধারিত ছিল এয়ারড্রপ করার জন্য, সে জায়গার পরিবর্তন হয় মাত্র ৫০ নটিক্যাল মাইল আগে। কিন্তু তিনি দক্ষতার সঙ্গে তাঁর ক্রু দলকে নির্দেশ দিয়ে নির্ভুলভাবে এয়ারড্রপ নিশ্চিত করেন। এর ফলে জলদস্যুরা ধরা পড়ে এবং হাইজ্যাক হওয়া এমভি রুয়েন জাহাজের ১৭ জন নাবিককে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
উইং কমান্ডার সাক্সেনা ২০০৬ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০২১ সাল থেকে C-17 স্কোয়াড্রনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আয়োজিত এই এই মিশন ছিল অত্যন্ত গোপনীয় ও সংবেদনশীল। তিনি দ্রুততার সঙ্গে একটি দক্ষ ক্রু দল প্রস্তুত করেন এবং বিমানকে অভিযানের জন্য তৈরি রাখেন।
অভিযানে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল জলদস্যুদের অস্ত্র, দীর্ঘ সময় ধরে একটানা উড়ান এবং অন্য দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করা। উইং কমান্ডার সাক্সেনা ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে মিশনটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করেন। পুরো ১০ ঘণ্টার অভিযানে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। এই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং অভিযানে তিনি অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব, পেশাদারিত্ব এবং দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দেন।