শেষ আপডেট: 10 May 2025 09:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ (IMF Loan to Pakistan) অনুমোদন করল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)। শুক্রবার রাতে এই দাবি করেছে পাক প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। আইএমএফ অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনও বিবৃতি দেয়নি।
পাকিস্তানকে এই ঋণ কেন দিচ্ছে আইএমএফ? খুব সহজ ভাবে বুঝতে গেলে বলা যায়, ‘Extended Fund Facility’ বা বিস্তৃত তহবিল সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য পাকিস্তানের টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা।
ভারত চেয়েছিল, এখনই আইএমএফ এই ঋণ পাকিস্তানকে না দিক। কারণ, নয়াদিল্লির আশঙ্কা রয়েছে, এই টাকা ভারত বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করবে ইসলামাবাদ। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তাঁর কথায়, ‘ভারতের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ’ হল। ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের একতরফা আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার পরেও আইএমএফ ঋণ অনুমোদন করায় প্রমাণ হয় যে পাকিস্তান সঠিক পথে এগোচ্ছে।”
ভারতের অর্থ মন্ত্রক এই ঋণের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল। দিল্লির পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, পাকিস্তান এই আন্তর্জাতিক সহায়তা সন্ত্রাসবাদের খরচ জোগাতে ব্যবহার করতে পারে। এক বিবৃতিতে ভারতের অর্থ মন্ত্রক জানায়, “সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসে মদত দিয়ে যাওয়া কোনও দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সাহায্য দুনিয়া জুড়ে ভুল বার্তা দেবে। এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
শুক্রবার আইএমএফ বোর্ডের সভায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ছাড়ের পাশাপাশি ‘Resilience and Sustainability Facility’-এর আওতায় অতিরিক্ত ১.৩ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবও বিবেচনায় আসে। ভারত ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকে এবং তীব্র আপত্তি জানায়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দেশের অর্থনৈতিক সূচক আগের তুলনায় উন্নত এবং সরকার কর সংস্কার, জ্বালানি খাত উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে।
আইএমএফ ও পাকিস্তানের মধ্যে ৩৯ মাস মেয়াদি ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা চুক্তি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছরের মার্চে প্রথম ছয় মাসের অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে একটি স্টাফ-লেভেল চুক্তিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। সেই চুক্তির আওতায় কর কাঠামো সংস্কার, কার্বন লেভি, বিদ্যুৎ ও জলমূল্যের সংস্কার, এবং অটোমোবাইল খাতের উদারীকরণে একমত হয় ইসলামাবাদ।
এই ঋণ ছাড়ের ফলে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত মোট ২ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ইসলামাবাদ সফলভাবে সাতটি ছয়-মাস মেয়াদি মূল্যায়ন সম্পন্ন করলে আরও সমপরিমাণ কিস্তি পাওয়ার অধিকার অর্জন করতে পারে।
আইএমএফের এই পদক্ষেপ নিয়ে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের মতে, পাকিস্তানের মতো একটি সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার মতো রাষ্ট্রকে এত টাকা দেওয়ার বিরূপ ফল অনিবার্য। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশ খারাপ হলে এর পর আইএমএফও দায়ী থাকবে।