১৫ বছরের কিশোর কার্লো 'গডস ইনফ্লুয়েন্সার' বলে খ্যাত।
শেষ আপডেট: 23 April 2025 07:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের নির্বাচিত কার্লো অ্যাকুতিস মরণোত্তর 'সেন্ট' বা সিদ্ধ পুরুষের সম্মান পেতে চলেছেন আগামী ২৭ এপ্রিল, রবিবার। কাউকে সেন্ট ঘোষণা করতে গেলে তাঁর মধ্যে অন্তত দুটি অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকার প্রয়োজন। এটা পরীক্ষার পর খোদ পোপ এই স্বীকৃতি দেন। আগামী শনিবার তাঁকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেন্ট করার কথা ছিল খোদ পোপের। কিন্তু, তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে অনুষ্ঠানটি একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইতালীয় বংশজাত ব্রিটিশ ১৫ বছরের কিশোর কার্লো 'গডস ইনফ্লুয়েন্সার' বলে খ্যাত। ২০২৪ সালে তাঁকে মরণোত্তর সেন্ট মর্যাদা দিয়েছিলেন প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে লিউকেমিয়ায় মৃত্যু হয় কার্লোর। প্রতিদিন কয়েক হাজার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ভক্ত ইতালির আসসিসি শহরে অ্যাকুতিসের সমাধি দেখতে যান। গতবছর প্রায় ১০ লক্ষ ভক্ত তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে আসেন।
কার্লো অ্যাকুতিসের অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা
১। কোস্টা রিকার এক যুবতী বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পান। ঐশ্বরিক ক্ষমতায় তাঁকে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে এনেছিলেন কার্লো। দুর্ঘটনার পর ডাক্তাররা ভ্যালেরিয়া ভালভার্দে নামে ২১ বছরের ওই যুবতীর বাড়ির লোককে জবাব দিয়ে দেন। তিনি আর বাঁচবেন না বা বাঁচার আশা নেই বলে দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। এই অবস্থায় যুবতীর মা আসিসিতে গিয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য অ্যাকুতিসের সমাধিতে গিয়ে প্রার্থনা করেন। তারপর থেকেই মেয়ের অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। শেষপর্যন্ত তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পরিবারের দাবি, যেদিন অ্যাকুতিসের সমাধিতে প্রার্থনা করেছিলেন মৃত্যুশয্যায় থাকা মেয়ের মা, সেদিনই নিজে থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শুরু করেন তিনি। পরে সিটি স্ক্যান করে ধরা পড়ে মস্তিষ্কে যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, তা পুরোপুরি গায়েব হয়ে গিয়েছে।
২। প্রথম অলৌকিক ক্ষমতা ধরা পড়ে ব্রাজিলের এক নাবালক ম্যাথিউজের রোগ নিরাময়ের মধ্য দিয়ে। ছেলেটির জন্ম থেকে প্যাংক্রিয়াসের সমস্যা ছিল। যা দিনদিন বাড়তে থাকলে সে প্রায় মৃত্যুমুখে চলে আসে। সেবারেও ডাক্তাররা চিকিৎসার বাইরে চলে গিয়েছে বলে জবাব দিয়ে দেন। কিন্তু ছেলের মা গির্জার দ্বারস্থ হন। গির্জার এক সাধু কার্লোর কাছে ৭ বছরের ওই ছেলের জীবন প্রার্থনা করেন এবং তারপরে অ্যাকুতিসের একটি টি-শার্ট ম্যাথিউজের শরীরে বুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে ওই নাবালক এবং পরে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কে কার্লো অ্যাকুতিস?
কার্লোর জন্ম ১৯৯১ সালের মে মাসে লন্ডনে। ধনী ইতালীয় পরিবারে জন্মানো অ্যাকুতিস বড় হয়েছেন ইতালির মিলানে। জন্ম থেকেই তাঁর মধ্যে এক অদ্ভুত খ্রিস্টভাব দেখা দেয় এবং মাত্র ৭ বছর বয়সে প্রথম তাঁর প্রথম ঈশ্বর প্রতীতি হয় বলে দাবি করা হয়। সে প্রায় রোজই গির্জার প্রার্থনাসভায় যেত। এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন থাকত। এ সত্ত্বেও কার্লো আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই ঘুরতে-বেড়াতে, ভিডিও গেম খেলতে এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাসি-মশকরাও করত।
২০০৬ সালের অক্টোবরে এহেন প্রাণচঞ্চল কিশোরের ১৫ বছর বয়সে রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে। এবং মাত্র ১০ দিনের মধ্যে উত্তর ইতালির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কার্লো। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সেন্ট ফ্রান্সিসের নিজের শহর আসসিসিতে সমাহিত করা হয়।