রাতারাতি ইরানে প্রায় ৩৩০টি ড্রোন হামলার নেপথ্য নায়ক মূলত মোসাদের গুপ্তচররা।
তেহরানের কাছে একটি ড্রোন ঘাঁটিও গড়ে তোলা হয়েছিল মোসাদের নৈপুণ্যে।
শেষ আপডেট: 14 June 2025 09:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইরানের বুকে অপারেশন রাইজিং লায়ন অভিযানের সাফল্যে ফের একবার সামনে এল ইজরায়েলের চর বাহিনী মোসাদের কৃতিত্ব। আচমকা রাতারাতি ইরানে প্রায় ৩৩০টি ড্রোন হামলার নেপথ্য নায়ক মূলত মোসাদের গুপ্তচররা। যারা ছায়ার মতো বছরের পর বছর ধরে সেখানে গড়ে তুলেছিল এক বিরাট নেটওয়ার্ক। জানা গিয়েছে, তেহরানের কাছে একটি ড্রোন ঘাঁটিও গড়ে তোলা হয়েছিল মোসাদের নৈপুণ্যে। এবং সেখান থেকেই ইজরায়েলের বিমানবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথ হানাদারিতে শামিল হয় মোসাদ।
ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও সেনা শিবিরে হামলার কয়েক বছর আগে থেকেই সেদেশে বসে হামলার জমি তৈরি করে গিয়েছে মোসাদ। ইজরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, বছরের পর বছর ধরে মোসাদ ইরানে কাজ করে চলেছে। তাদের ঘুমিয়ে থাকা এই গোপন নেটওয়ার্ক সঠিক সময়ে কাজে লাগানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল চর সংস্থার কমান্ডোরা।
ইরানি বাহিনী ও তাদের চর সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে মোসাদ সেখানেই একটি অব্যর্থ নিশানাবাজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও ড্রোন ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। যা রাজধানী তেহরানের খুব কাছাকাছি এলাকাতেই অবস্থিত। নির্দেশ পাওয়ার পর মোসাদ বাহিনী সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবং একসঙ্গে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। তার সঙ্গে জুড়িদার হিসেবে আমেরিকার তৈরি এফ-সিরিজের প্রায় ২০০-র বেশি যুদ্ধবিমান নিয়ে যোগ দেয় ইজরায়েলের বিমানবাহিনী।
যুদ্ধ পরিসংখ্যানবিদরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ইজরায়েল তার সক্রিয় যুদ্ধবিমানের ৬০ শতাংশকেই হামলায় নামিয়েছিল। মোসাদ ও ইজরায়েলি বাহিনী মিলে তাই খুব সহজেই ইরানি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে প্রথমে অকেজো করে দেয়। এমনকী মোসাদের চররাই খুব কাছ থেকে তেহরানের অব্যর্থ নিশানাবাজ ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকেও নষ্ট করতে সক্ষম হয়। যার ফলে ইজরায়েলের প্রথম ধাক্কাকে প্রতিহত করতে পারেনি ইরান। মোসাদের এই গুপ্ত কর্মকাণ্ড টের পেতে তাদের অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
ইজরায়েলি প্রচার মাধ্যম টুয়েলভ ওয়াইনেট জানিয়েছে, বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন ইরানের বুক থেকে ছোড়া হয়েছিল। যাতে ইরানের তেহরানের কাছে আসফাকাবাদ ঘাঁটির ব্যালেস্টিক মিসাইল লঞ্চপ্যাড ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘাঁটি অকেজো না করতে পারলে প্রতি জবাবে এর দ্বারা ইজরায়েলি শহরগুলি গুঁড়িয়ে দিতে পারত ইরান।
ইজরায়েলের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে, মোসাদের এজেন্টরা ইরানের ভিতরেই ক্ষেপণাস্ত্র সাজাচ্ছে এবং বিস্ফোরক ড্রোনকে টার্গেটের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারিগরি কাজ করছে। মোসাদ হল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস-এর হিব্রু ভাষা। গত ৮০ বছর ধরে অসংখ্য আন্ডারকভার অপারেশনের নায়ক। এবং বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গুপ্তচর সংস্থা বলে স্বীকৃত।
এই অপারেশনের মাত্র ১০ মাস আগেই লেবাননে হিজবুল্লা জঙ্গি গোষ্ঠীকে একদিনে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে প্রায় নিকেশ করে দিয়েছিল মোসাদ। এছাড়াও মোসাদের অপারেশনগুলির মধ্যে রয়েছে, ইরানের একটি নির্জন রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে থাকা শীর্ষ এক ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক মেশিন গান দিয়ে হত্যা করা। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশে কম্পিউটারগুলিকে ম্যালওয়্যার ভাইরাস হামলা চালিয়ে বিকল করে দেওয়া। সেখান থেকে ইরানের গোপন পরমাণু তথ্যাবলি হাতিয়ে নিয়েছিল মোসাদ। গত বছর হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েকে তেহরানের একটি সরকারি আবাসনের ঘরে বোমা বিস্ফোরণে হত্যা করাও ছিল মোসাদেরই কাজ।