আগামিকাল, ৬ জুন, জুম্মাবারে অধিকৃত কাশ্মীরে এক বিশাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে গিলগিট-বালটিস্তান আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি।
সরকার গিলগিট-বালটিস্তান আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি ও সহযোগী আন্দোলনকারী দলের ১৩ জন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে।
শেষ আপডেট: 5 June 2025 06:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও ধীরে ধীরে পড়ছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকার-বিরোধী বালুচিস্তানের বিদ্রোহের ছায়া। আগামিকাল, ৬ জুন, জুম্মাবারে অধিকৃত কাশ্মীরে এক বিশাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে গিলগিট-বালটিস্তান আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি। সেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনে এখন থেকেই কোমর বাঁধছে পাকিস্তানের সরকারি পুলিশ-প্রশাসন। পাকিস্তানের জেলে বন্দি থাকা কমিটির বিরাট সংখ্যক নেতাদের মুক্তিদের দাবিতে ডাকা এই বিক্ষোভে সরকার ইচ্ছাকৃত হাঙ্গামা বাধাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। দলের এক নেতা জানান, বাহিনী নামিয়ে বলপ্রয়োগ করে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালাবে সরকার।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তান অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তানের কয়েক হাজার বাসিন্দা শাহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর তিতিবিরক্ত হয়ে গত রবিবার পর্যন্ত তিনদিন ধরে কারাকোরাম হাইওয়ে অবরোধ করে রেখেছিলেন। চিন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডরের ‘মুকুটের মণি’ এই হাইওয়ে দুই দেশের অন্যতম যোগাযোগের সড়ক। শরিফের দলেরই এক নেতার কথায়, সরকার যখন জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য দিয়ে চলেছে, তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা ভাবছে না। এলাকার বাণিজ্য ক্ষতির মুখে জেনেও সরকার তা মেটাতে ব্যর্থ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দিনদিন পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে বালুচিস্তানের ছায়া দেখা যাচ্ছে অধিকৃত কাশ্মীরের এই অংশে। ভারতভাগের পর থেকে এই এলাকার রাজনৈতিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে চলেছে। গিলগিল-বালটিস্তান ইউনাইটেড মুভমেন্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর হুসেইন পরওয়ানা বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের উপর শাহবাজ শরিফ সরকার পরিকল্পিত শোষণ, জনসংখ্যাগত হ্রাস এবং বেআইনিভাবে শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর অভিযোগ, সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের মানুষ ন্যূনতম মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের কোনও জাতীয় পরিচয় নেই। জীবনধারণের অত্যাবশ্যক চাহিদা যেমন- পানীয় জল, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষা নেই। তিনি আরও বলেন, এখন জমি সংস্কারের নামে এবং রাজ্যের বিষয় বিধির অবলুপ্তি ঘটিয়ে সরকার আমাদের ইতিহাস মুছে ফেলতে চাইছে। আমাদের ঘরছাড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
কাশ্মীরের একাংশ দখল করার পর থেকে পাকিস্তান সরকার গিলগিট-বালটিস্তানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি অথবা রাজ্যের মর্যাদা দেয়নি। এখানকার সমাজকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ তুলে আসছেন যে, ঔপনিবেশিক মানসিকতার শাসন ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে যুগ যুগ ধরে। ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির রাজনৈতিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো এখানকার শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়।
পরওয়ানার অভিযোগ, সাম্প্রতিক জমি সংস্কার আইন চালু করে সরকার আমাদের বনজঙ্গল, তৃণভূমি, খনিজ, পাহাড় ও হিমবাহকে জাতীয় সম্পত্তি করে নিয়েছে। যার ফলে আমরা নিজভূমেই পরবাসী হয়ে গিয়েছি। এই আইন শুধু বেআইনি নয়, আমাদের সংস্কৃতি-পরম্পরা এবং শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে খতম করার চক্রান্ত। সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গত ২৪ মে একটি মহাবিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল।
পরওয়ানার অভিযোগ, মানুষের ক্ষোভ দেখে সরকার গিলগিট-বালটিস্তান আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি ও সহযোগী আন্দোলনকারী দলের ১৩ জন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও এফআইআর করায় কয়েকশো কর্মী পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। এঁদের সকলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘরের পুরুষরা হয় নজরবন্দি নয়তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই মহিলা রাস্তায় বেরিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ঠিক করে দেওয়া গিলগিট-বালটিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেছেন, জমি ও খনি আইনের বিরোধিতা যারা করবে, তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। এই ঘোষণায় আরও ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে এই এলাকায়।