শেষ আপডেট: 8th December 2024 21:22
২০০০ সালে হাফেজের মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় ছেলে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। প্রথম দিকে তাঁর শাসন সংস্কারের আশ্বাস দিলেও পরে তিনি তার পিতার মতোই কঠোর নীতিতে ফিরে যান।
বাশার তাঁর শাসনকালকে আরও শক্তিশালী করতে তার পরিবার ও কাছের সহযোগীদের নিয়ে একটি দল তৈরি করেন। এর মধ্যে তার ভাই মাহের আল-আসাদ ও বোন বুশরার মতো পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়াতেও আছড়ে পড়ে। সিরিয়ার জনগণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি তোলে। কিন্তু বাশার সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে এই আন্দোলন রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে।
বাশার আল-আসাদ রাশিয়া ও ইরানের সামরিক সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকেন। রাশিয়ার বিমান হামলা ও ইরানের সামরিক বাহিনী তার শাসনকে রক্ষা করে। তবে, সিরিয়ার জনগণের জন্য এই যুদ্ধ ছিল এক দীর্ঘ দুর্দশার সময়।
এবছরেই বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে। অবশেষে, তারা রাজধানী দামাস্কাসে প্রবেশ করে ডিসেম্বরের গোড়ায়। বিদ্রোহীদের এই অভিযান আসাদ সরকারের পতন ঘটায় ৮ ডিসেম্বর।
বিদ্রোহী নেতারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, এইচটিএস-এর অতীতের চরমপন্থী কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কি শান্তিপূর্ণ হবে নাকি নতুন শাসকগোষ্ঠী নতুন শোষণের জন্ম দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।
আসাদের পতনে রাশিয়া ও ইরানের প্রভাবের উপর বড় আঘাত এসেছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের জন্য আসাদ সরকার ছিল প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা এখন ভেঙে পড়েছে। এর ফলে ইজরায়েল সুবিধার প্রান্তে পৌঁছেছে।
আসাদ পরিবারের পতন সিরিয়ার মানুষের জন্য হয়তো একটি নতুন সূচনা, কিন্তু গৃহযুদ্ধের ক্ষত এখনও গভীর। লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়া এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে। বিদ্রোহী নেতৃত্ব কি সত্যিই একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।