সৌদি আরবের চুক্তি করলেন ট্রাম্প
শেষ আপডেট: 13 May 2025 21:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রবাদ রয়েছে, বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যে বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না তা ফের স্পষ্ট হল মঙ্গলবার।
মঙ্গলবার রিয়াধে এক ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক চুক্তি ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সৌদি আরবের সঙ্গে এই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিকে 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির বড় সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প। যে চুক্তির আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে বিপুল অঙ্কের সৌদি বিনিয়োগ আসবে যুক্তরাষ্ট্রে।
রিয়াধের রয়্যাল কোর্টে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে এক যৌথ অনুষ্ঠানে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। অনুষ্ঠানে সৌদি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনার জাঁকজমক ছিল চোখে পড়ার মতো।
চুক্তির পর ট্রাম্প বলেন, “আমি এবং যুবরাজ একে অপরকে খুব পছন্দ করি। সৌদি আরবের এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।”
এই সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক, ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান, ব্ল্যাকরক প্রধান ল্যারি ফিঙ্ক এবং ব্ল্যাকস্টোনের সিইও স্টিফেন শোয়ার্জম্যান।
গত কদিন ধরে ভারতের রাজনৈতিক পরিসরেও ডোনাল্ড ট্রাম্প চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। কারণ ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, ভারত-পাক যুদ্ধবিরতিতে (India Pakistan Ceasefire) বিশ্বকর্মা ছিলেন তিনি। এই অবস্থায় ঘরোয়া রাজনীতিতে বিরোধীরাও মোদী সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছে যে, কোন শর্তে ট্রাম্পকে মধ্যস্ততা করতে দেওয়া হল? তা হলে কি ডোনাল্ড ট্রাম্প তথা আমেরিকাকে ভারতে কৃষি, অটোমোবাইল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাণিজ্যের সুযোগ করে দিচ্ছে নয়াদিল্লি?
ভারতে যখন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন দেখা গিয়েছে পশ্চিম এশিয়া থেকে ঝোলা ভরে বিনিয়োগ আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
আমেরিকা সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তির সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ সামরিক বিক্রয় চুক্তি। এর আওতায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, নৌ ও উপকূলীয় নিরাপত্তা, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং সৌদি সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের বিষয়গুলি রয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছে একাধিক মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা।
তা ছাড়া সৌদি প্রযুক্তি সংস্থা DataVolt যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এআই ডেটা সেন্টার ও জ্বালানি পরিকাঠামো গড়তে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। পাশাপাশি গুগল ( Google) , অরাকল (Oracle), এএমডি (AMD), উবার (Uber), সেলসফোর্সের (Salesforce) মতো মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে ৮০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তি উন্নয়নে।
বাজার পেল মার্কিন কোম্পানিগুলি
যুক্তরাষ্ট্রের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা জেকব, এইকম, হিল ইন্টারন্যাশনাল ও পারসনস সৌদি আরবের ‘কিং সালমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’, ‘কিদ্দিয়া সিটি’ এবং ‘দ্য ভল্ট’ প্রকল্পে কাজ করবে। এতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পরিষেবা রফতানির সুযোগ তৈরি হবে।
বিমান ও জ্বালানি চুক্তিও হল
জিই ভারনোভা সৌদিতে গ্যাস টারবাইন ও শক্তি ব্যবস্থার সরবরাহে ১৪.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। বিমান সংস্থা বোয়িং (Boeing) ৪.৮ বিলিয়ন ডলারে ৭৩৭-৮ মডেলের যাত্রীবাহী বিমান দেবে সৌদি লিজিং সংস্থা এভিলিজকে।
স্বাস্থ্য ও উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ
শামেখ ফোর সলিউশনস নামের এক মার্কিন সংস্থা মিশিগানে একটি নতুন কারখানা গড়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনফিউশন ফ্লুইড উৎপাদনে ৫.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
নতুন তহবিল, নতুন চাকরি
এই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি বিশেষ তহবিল গঠিত হচ্ছে—৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তহবিল, ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ তহবিল এবং ৪ বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল স্পোর্টস ফান্ড। এগুলি মূলত মার্কিন শিল্প ও প্রযুক্তিখাতে পুঁজি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্যই তৈরি হচ্ছে।