শেষ আপডেট: 8th January 2025 10:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সামরিক তাকত দেখিয়ে আবারও বিশ্বকে চমকে দিল চিন। যাকে বলা হচ্ছে, বেজিংয়ের ‘পাওয়ার প্লে!’
গত সপ্তাহে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে চিন তিনটি নজরকাড়া সামরিক মহড়া চালিয়েছে। প্রথমে চিনের আকাশে দেখা মিলেছে দুটি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। পরদিন চিন জলে নামিয়েছে একটি বিশাল টাইপ ০৭৬ অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ, যা কার্যত একটি হালকা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। একই সময়ে পরীক্ষামূলক উড়ান চালানো হয়েছে তাদের নতুন কেজে-৩০০০ আর্লি ওয়ার্নিং এয়ারক্রাফ্টের, যা চিনা প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত জেট ইঞ্জিন ডব্লিউএস-২০ দিয়ে চালিত।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তিনটি পদক্ষেপ চিনের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। শুধু তাই নয়, ভারতের জন্য এই সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বার্তাও বয়ে আনছে।
ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান: কতটা শক্তিধর?
চিনের আকাশে সদ্য দেখতে পাওয়া দুটি যুদ্ধবিমান নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এগুলি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলতে বোঝানো হয় এমন এয়ারক্রাফট, যা সমস্ত যুদ্ধবিমানের তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। এর সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে—
• স্টেলথ প্রযুক্তি: অত্যন্ত উন্নত স্টেলথ সিস্টেম, যা রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনে।
• হাইপারসনিক গতি: সাধারণ ফাইটার জেটের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে উড়তে সক্ষম।
• এআই পরিচালিত সিস্টেম: বিমান পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর সাহায্যে আরও দক্ষতা অর্জন।
• নেটওয়ার্কড যুদ্ধ: বিমানটি অন্য ড্রোন, স্যাটেলাইট এবং স্থল-সেনার সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করতে পারে।
• নতুন প্রজন্মের অস্ত্র: লেজার বা মাইক্রোওয়েভ-ভিত্তিক অস্ত্র পরিচালনার সক্ষমতা।
• যদি চীনের এই দুটি বিমান সত্যিই ষষ্ঠ প্রজন্মের হয়, তবে তা শুধু ভারতের নয়, আমেরিকার মতো দেশগুলির জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
টাইপ ০৭৬ অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ: শক্তি বাড়ছে চিনা নৌবাহিনীর
এই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ শুধু সৈন্য পরিবহন নয়, কার্যত একটি হালকা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হিসেবেও কাজ করতে পারে। এতে রয়েছে—
• হেলিকপ্টার ও ভিটিওএল (উল্লম্ব ভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণকারী বিমান) পরিচালনার ক্ষমতা।
• ড্রোন অপারেশন: আধুনিক ড্রোনের সাহায্যে সমুদ্র থেকে সুনির্দিষ্ট আক্রমণের ক্ষমতা।
• CATOBAR সিস্টেম: ভারী যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণের জন্য ক্যাটাপল্টের সাহায্য।
• চিনের সামুদ্রিক কৌশলগত অবস্থানের ক্ষেত্রে দক্ষিণ চিন সাগর, তাইওয়ান প্রণালী এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে এই জাহাজ নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
কেজে-৩০০০ আর্লি ওয়ার্নিং এয়ারক্রাফট:
চিনের এই নতুন বিমান মূলত শত্রু পক্ষের গতিবিধি নজরদারি এবং কমান্ড সেন্টার হিসেবে কাজ করার জন্য তৈরি। নতুন ইঞ্জিন ডব্লিউএস-২০ দিয়ে এটি দীর্ঘক্ষণ আকাশে থাকতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি চিনের সামরিক গোয়েন্দাগিরি এবং বড় পরিসরের সামরিক অভিযানে অত্যন্ত কার্যকর হবে।
ভারতের জন্য কৌশলগত প্রভাব
চিনের এই সাফল্যের পর ভারতের প্রতিরক্ষায় বেশ কিছু দিক থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে:
• আকাশপথে আধিপত্য: ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার জেট থাকলে চিনের আকাশপথে আধিপত্য আরও বাড়বে। ভারতীয় বায়ুসেনার রাফাল বা সু-৩০ এমকেআই-এর মতো চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলির পক্ষে এই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে।
• সমুদ্রপথে সংঘাতের ঝুঁকি: টাইপ ০৭৬ জাহাজ ভারত মহাসাগরে চিনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি আরও বাড়াবে। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এটি একটি বড় কৌশলগত চাপ।
• গোয়েন্দাগিরি ও সাইবার যুদ্ধ: কেজে-৩০০০ এবং AI-চালিত ফাইটার জেটের মাধ্যমে চিন সাইবার যুদ্ধ এবং গোয়েন্দাগিরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে পারে।
ভারতের কী করা উচিত?
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উচিত—
• পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরিতে জোর দেওয়া।
• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করা।
• সমুদ্রপথে নজরদারি বাড়ানো এবং ভারত মহাসাগরে আধিপত্য ধরে রাখা।
• ড্রোন ও AI-চালিত অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ।
চিনের এই সাফল্যের ফলে ভারত-চিন প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রা পেতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।