কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে তৈরি প্রোটিনকে পশুখাদ্য হিসেবে অনুমোদন দিল চিন। এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
চিনের নতুন ডিম।
শেষ আপডেট: 4 July 2025 07:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পশুখাদ্যের সঙ্কট মোকাবিলায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ করেছে চিন। সম্প্রতি এমন একটি নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি শুরু হয়েছে সেখানে, যেটি কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) থেকে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। একেবারে ডিমের মতো দেখতে। বলা যায়, ডিমই। সেরকমই প্রোটিনে ভরপুর এক খাবার। তবে তা কেবল পশুদের জন্য। এই অভিনব প্রযুক্তির ফলে পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প-কার্বন উন্নয়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চিন।
বেজিংয়ের একটি বায়োটেক সংস্থা এই প্রোটিনটি উৎপাদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইয়ারোইয়া লিপোলাইটিকা (Yarrowia lipolytica) নামের একধরনের ইস্ট ছত্রাক (yeast) ব্যবহার করে এই প্রোটিন তৈরি করা হয়েছে।
এটি মূলত শিল্পক্ষেত্র থেকে অর্থাৎ কয়লা কারখানা, প্রাকৃতিক গ্যাস কারখানা এবং ইস্পাত শিল্প থেকে নির্গতকার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে তৈরি হয় বায়ো-ফারমেন্টেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকরভাবে ক্ষতিকর ওই কালো ধোঁয়া থেকে উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ইস্ট প্রোটিনে রূপান্তর করছে।
শুধু তাই নয়, চিন সরকারের এক সায়েন্স জার্নালের সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ কিংবা মাছ চাষের মাধ্যমে পশুখাদ্যের জন্য যে প্রোটিন উৎপাদন হতো এত দিন, সেই তুলনায় এই নতুন প্রযুক্তি কয়েক হাজার গুণ বেশি কার্যকর।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, মাত্র ১০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে ওঠা একটি ইস্ট প্রোটিন কারখানা বছরে ১ লাখ টন উচ্চমানের ইস্ট প্রোটিন উৎপাদন করতে সক্ষম। তুলনায়, একই পরিমাণ সয়া প্রোটিন উৎপাদন করতে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়ে।
জানা যাচ্ছে, এই ইস্ট প্রোটিনে আছে উচ্চমাত্রার প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, যার বণ্টন অত্যন্ত সুষম এবং যা প্রাণীদের জন্য খেতে সহজ ও গ্রহণযোগ্য। এ ছাড়াও এতে রয়েছে ট্রেস এলিমেন্ট ও পলিস্যাকারাইডের মতো উপকারী উপাদান।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পশুখাদ্যের জন্য একটি সম্পদ-সাশ্রয়ী প্রোটিন সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এটি অনেক বেশি জমিতে সয়া চাষ করার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেবে। মাছের গুঁড়োর মতো সামুদ্রিক সম্পদের ওপরও নির্ভরতা কমাবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চিন প্রচণ্ড পশুখাদ্য প্রোটিন সংকটে ভুগছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মোট প্রোটিনভিত্তিক পশুখাদ্য ব্যবহারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭ কোটি টন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এই প্রেক্ষাপটে, CO2 থেকে উৎপাদিত ইস্ট প্রোটিন প্রযুক্তি চিনের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা এবং কৃষিতে উন্নতির এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।