শেষ আপডেট: 25th March 2025 22:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো, লন্ডন: সোমবার লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের অনুষ্ঠান যেখানে শেষ করেছিলেন, মঙ্গলবারের বাণিজ্য বৈঠক যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee London Tour)।
সোমবার মমতা বলেছিলেন, অতীতে লন্ডন-কলকাতার সরাসরি বিমান পরিষেবা ছিল। ২০১১ সালের আগেই যা বন্ধ হয়ে যায়। কেন পুনরায় তা চালু করা হবে না, ভারতীয় দূতাবাসের অনুষ্ঠান থেকে সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর মঙ্গলবার লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে ১ নম্বর এডওয়ার্ডয়ান হলে উপস্থিত বিদেশি শিল্পপতিদের অভ্যর্থনা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, "যাঁরা প্রথম এগিয়ে আসবেন, তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।”
কী সেই ছাড়?
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "শিলিগুড়ি-কলকাতা জ্বালানিতে ছাড় দেব আমরা।" ভরসা জোগালেন, "বাংলায় আসুন, বিনিয়োগ করুন, কথা দিচ্ছি খালি হাতে ফিরতে হবে না।" সরাসরি লন্ডন থেকে কলকাতা বিমান চালু হলে তাতে যে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী মিলবে, সেকথাও শুনিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "এখন প্রতিটি বিমানেই যাত্রী আসন ভর্তি থাকে।"
দক্ষ শ্রমিক থেকে শিল্পায়নের অনুকুল পরিবেশ, একটিও কর্মদিবস নষ্ট না হওয়া নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি অতীতের বাম সরকারের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "পূর্বতন সরকারের জন্য বাংলা সমস্ত জৌলুস হারিয়েছে। আগে কথায় কথায় ধর্মঘট হত। ওরা ৭৫ হাজার কর্মদিবস নষ্ট করেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে একদিনও কর্মদিবস নষ্ট হয় না।"
শিল্পায়নে বাংলা যে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে, তা বোঝাতে সদ্য সমাপ্ত শিল্প বাণিজ্য সম্মেলনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলায় ১৯ লক্ষ কোটির বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটি বিনিয়োগ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
শিল্পায়নে জোর দিতে পরিকাঠামোগত মানোন্নয়নও যে হচ্ছে, তা বোঝাতে রাজ্যজুড়ে ৬টা বাণিজ্য করিডরের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাখনির কেন্দ্র হচ্ছে বীরভূমের দেউচা পাচামিতে। বলেছেন, একসময় রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি হত, এখন উদ্বৃত্ত হয় এবং কম খরচে রাজ্যের মানুষ বিদ্যুৎ পান।
করোনা পরবর্তী সময়ে যেখানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি সেখানেও বাংলা সর্বক্ষেত্রে কীভাবে এগিয়ে চলেছে তা বোঝাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সব জায়গায় বেকারত্ব বাড়ছে, সেখানে আমরা শতকরা ৪৬ শতাংশ বেকারত্বের কমিয়েছি, এটা কি বড় সাফল্য নয়?" হাততালি দিয়ে সম্মতি জানান বাণিজ্য বৈঠকে উপস্থিত সকলেই।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে রাজ্যে দারিদ্র্যসীমার নীচে ছিলেন ৫৭.৬০ শতাংশ মানুষ, এখন সেখানে মাত্র ৮.৬০ শতাংশ। ছাত্র থেকে মহিলা, বৃদ্ধ, শ্রমিক- রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের জন্য বাংলায় সরকারিভাবে ৯৪টি স্কিম চালু রেখেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আমরা সবাইকে সুরক্ষা দিই। এটা সহজ কাজ নয়।"
বাণিজ্য বৈঠকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের প্রসঙ্গ কেন? পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বাংলা বিনিয়োগকারীদের কাছে কতখানি সুরক্ষিত তা বোঝাতেই এই প্রসঙ্গ টেনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চুম্বকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, "বাংলায় আসুন, বিনিয়োগ করুন, কথা দিচ্ছি বাংলা আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না।"